করোনা মহামারির কারণে স্থগিত প্রথম ধাপের দ্বিতীয় কিস্তির ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন আজ। এসব ইউনিয়নের ৪৫টিতেই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের হার ২৮ ভাগ। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী আজ ষষ্ঠ ধাপের ৯টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে তিনটি পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী বিনা ভোটে বিজয়ী হয়েছে। পৌরসভা তিনটি হলো লাঙ্গলকোট, বোয়ালখালী ও কবিরহাট।
এবারের ইউপি নির্বাচনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড হচ্ছে। এরআগে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে ২১২ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ১০০ জন প্রার্থী ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় এটিই ছিল বিনা ভোটে নির্বাচিতের রেকর্ড।
এবারের প্রথম ধাপের দ্বিতীয় কিস্তির নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের ৬৬টি ইউপি’র মধ্যে ৩৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা ভোটেই তারা নির্বাচিত হচ্ছেন। বাগেরহাটের বাইরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৪টি এবং খুলনার ১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে কয়েক ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। গত ৩রা মার্চ প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউপি’র ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। গত ২১শে জুন ২০৪টি ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার পর বাকি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে একটি বড় সংখ্যক প্রার্থী বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা তো নতুন কিছু নয়। এখন তো নির্বাচন এমনই হয়ে আসছে আর এভাবেই হবে। কে করবে পরিবর্তন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো যে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর নির্বাচন হতো আমরা তো আর সেই নির্বাচন ফিরে পাবো না। মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ নেই। ভোট কেন্দ্রগুলো থাকে খালি। মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতো তাহলে ভোটকেন্দ্রগুলো খালি পড়ে থাকতো না। দীর্ঘদিন ধরে একই ভোটের সংস্কৃতিতে মানুষ এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। এজন্য কেউ কোনো কথা বলছে না।
তিনি বলেন, সরকার তো বলছে মানুষ শান্তিতে আছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। দেশের ভবিষ্যৎ ভালো। আমি মনে করি এমন দেশে নির্বাচন না হলেও সমস্যা নেই। কারণ দেশে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে এই ধরনের নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের কোনো দরকার নেই। সরকার জেলা প্রশাসক দিয়ে এসব নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। এখন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি পাঁচটি করে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনিটরিং করে। সরকার কতো বলছে আর তাদের কাছে কি রেকর্ড আছে এটা যদি প্রকাশ করে দেয় সেটাই হবে জাতির জন্য বেস্ট ওয়ে, বেস্ট সার্ভিস। এই রেকর্ডগুলো একসময় ইতিহাসের নথিপত্র হিসেবে কাজ করবে।