নোয়াখালী থমথমে মুখোমুখি আওয়ামী লীগের ৩ গ্রুপ, সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক, ১৪৪ ধারা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


নোয়াখালী: নোয়াখালী জেলা শহরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপের সমাবেশকে ঘিরে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়েছে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছোড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে পথচারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ৩ গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ টহলে রয়েছে। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড় থেকে রশিদ কলোনি পর্যন্ত আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল ১০টায় ও শহরের টাউন হল মোড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন। একই সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকেন স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।

অপরদিকে সকাল ১০টায় নোয়াখালী পৌরসভায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করেন নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। আওয়ামী লীগের ত্রি-মুখী সমাবেশ ও আলোচনা সভা সফল করতে রোববার বিকালে শহরের রশিদ কলোনি থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। মোটরসাইকেল শোডাউনটি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে বাঁধা দেয় পুলিশ। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়া সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা পুলিশের সঙ্গে একত্র হয়ে শাহীন অনুসারীদের ধাওয়ার চেষ্টা করে। শাহীন অনুসারীরাও পাল্টা পুলিশ এবং একরাম অনুসারীদের ধাওয়া করে। এসময় পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে। এতে শাহীন অনুসারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় বেশ কিছু যানবাহনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শহরের প্রবেশ পথে জটলা বাঁেধ ঢাকা-চট্টগ্রামের শত শত গাড়ি। ভোগান্তির শিকার হয় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় আহত হয় পথচারী আলমগীর, জনি, ইশতিয়াক, নাসিমা বেগম, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম ছিদ্দিকী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন, যুবলীগ কর্মী মোহন, ছাত্রলীগ নেতা রাজুসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়। এদিকে বিকাল ৫টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের কর্মী-সমর্থকরা সোমবারের পূর্ব ঘোষিত আলোচনা সভা ও র‌্যালি সফল করার লক্ষে শহরের প্রধান সড়কে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে সেøাগান দিতে দিতে শোডাউন বের করে। শোডাউনটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে তাদের ওপর সাংসদ একরামের অনুসারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুনরায় শহরের পৌর বাজার থেকে রশিদ কলোনি প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে শিহাব উদ্দিন শাহীনের অনুসারীরা। নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, আমার নেতাকর্মীরা সোমবারের মুজিববর্ষের আলোচনা সভা ও র‌্যালি সফল করার লক্ষে বিকালে শোডাউন বের করে। শোউডানটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে সাংসদ একরামের লোকজন ইটপাটকেল নিয়ে হামলা চালালে তার পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় সোমবার সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্যোগ নিই। ওই কর্মসূচি সফল করতে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বিকালে শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে সুধারাম থানার ওসি শাহেদের নেতৃত্বে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় ওসির সহযোগিতায় একরাম চৌধুরীর কিছু সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমাদের কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠি চার্জ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে। মুজিব শতবর্ষের শোভাযাত্রায় পুলিশ বাঁধা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহীন। একই সাথে তিনি ওসি শাহেদের অপসারণ দাবি করেন। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নোয়াখালী পৌর এলাকায় সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। জেলা প্রশাসক ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে মানবজমিনকে বলেন, সব ধরনের সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ধারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নিয়ে আ’লীগের মাঝে ৩ গ্রুপের টানটান উত্তেজনায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *