মুখে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও কঠিন পরীক্ষা আফগানিস্তানে তালেবানদের সামনে। পুরো বিশ্ব তাদের দিকে কড়া নজর রেখেছে। এমন সময় কাবুলে অধিকার আন্দোলনকারী একদল নারীর বিক্ষোভ ভেঙে দিয়েছেন তালেবান কর্মকর্তারা। কয়েক ডজন নারী রাজধানী কাবুলে তাদের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ বের করেছিলেন। একটি সেতু থেকে হেঁটে এই বিক্ষোভ যাওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে। কিন্তু তার আগেই তাদের ওপর তালেবানরা কাঁদানে গ্যাস এবং মরিচের গুঁড়া স্প্রে করেছে বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারী নারীরা। কিন্তু আফগান মিডিয়া টোলো নিউজের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া রোধ করতে তালেবানরা এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
রাজধানী কাবুল এবং হেরাতে নারীদের বেশ কিছু বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার এবং সরকারে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবিতে এসব নারী বিক্ষোভ করছেন। তালেবানরা এখনও তাদের প্রশাসন অর্থাৎ মন্ত্রীপরিষদ ঘোষণা করেনি। এরই মধ্যে তাদের সিনিয়র সূত্র দাবি করেছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তা ঘোষণা করা হবে। সরকারে নারীদের অংশগ্রহণ থাকবে। তবে মন্ত্রী পর্যায়ে তাদের কোনো পদ দেয়া হবে না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ছিল তালেবানরা। সে সময় তারা নারীর প্রতি যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, সেই পদ্ধতি আবার ফিরে আসবে বলে অনেক নারী আতঙ্কে। তালেবানদের বিগত সরকারের সময়ে নারীদেরকে ঘরের বাইরে বের হতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে মুখ ঢেকে বের হতে হতো। ছিল কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।
টোলো নিউজকে সাংবাদিক অজিতা নাজিমি বলেছেন, ২৫ বছর আগে তালেবানরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাকে স্কুলে যেতে দেয়া হয়নি। তাদের ৫ বছরের শাসনের পর আমি ২৫ বছর ধরে পড়াশোনা করতে পেরেছি এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পারছি। আমাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আগের অবস্থা আর কখনো ঘটতে দিতে পারি না। আরেক বিক্ষোভকারী সুরাইয়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিগত শাসনের সময়ে তালেবানরা গান ম্যাগাজিন দিয়ে মাথায় আঘাত করতো। এতে রক্তাক্ত হতেন নারীরা।
ওদিকে পাঞ্জশের উপত্যকায় তালেবানদের সঙ্গে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহত আছে। ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছে তালেবানরা। এ নিয়ে দাবি, পাল্টা দাবি করা হয়েছে। তালেবানরা বলেছে, তারা কমপক্ষে দুটি জেলা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অগ্রসর হচ্ছে ওই প্রদেশের কেন্দ্রের দিকে। অন্যদিকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান (এনআরএফ) বলেছে, তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। কয়েক হাজার তালেবান যোদ্ধা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। পাঞ্জশের উপত্যকায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের বসবাস। একে বলা হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্র। এখানে এনআরএফের নেতা আহমেদ মাসুদ হেরাতে নারীদের বিক্ষোভের প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি পাঞ্জশেরে প্রতিরোধ অব্যাহত আছে। তবে এনআরএফ এবং তালেবান কারো দাবিই নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুল বিমানবন্দর সচল করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আফগানিস্তানের বিমান সংস্থা আরিয়ানা ঘোষণা দিয়েছে যে, তিনটি শহরে আভ্যন্তরীণ রুটে তারা বিমান চালাবে। এ শহরগুলো হলো হেরাত, মাজারে শরীফ ও কান্দাহার। ওদিকে কাতারের রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরকে সাহায্য গ্রহণের উপাযোগী করে উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন কাতারের প্রযুক্তি বিষয়ক টিম। আজ রোববার সকালে আল জাজিরা টিভি জানিয়েছে, এরই মধ্যে কাবুলে মানবিক সাহায্যও পাঠিয়েছে কাতার। আজই কাতার সফরে আসার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের। আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে কাতার। এই দেশটি সফরে এলেও তালেবানের কোনো নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কোনো শিডিউল নেই অ্যান্টনি ব্লিনকেনের।
অন্যদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান জেনারেল ফয়েজ হামিদ পৌঁছেছেন কাবুলে। এ সপ্তাহে একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠনে তালেবানদের সহায়তা করতে পারেন তিনি। তালেবানদেরকে সমর্থন করার জন্য আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে পশ্চিমা কিছু শক্তিধর দেশের। তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।