বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের এই দিনে দলটির যাত্রা শুরু হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতেগড়া দলটি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় আর দল গোছানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে পথ হাঁটছে দলটি।
আগামীতে দলীয় কার্যক্রম এবং পরিকল্পনার বিষয়ে বেশ কয়েকজন বিএনপি’র সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তারা জানান, বর্তমানে দলটির সামনের বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঐক্য ধরে রাখা। ২০২৩ সালে একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করা।
এর আগে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য জনমত তৈরি করা। যার ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা একটি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করেছেন। সেই মোতাবেক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। সবার মতামত নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিটি গঠনে একটি রূপরেখা প্রকাশ করবে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে নিরপেক্ষ ও সবার কাছে জাতীয় নির্বাচন আদায়ে ‘কার্যকরী’ আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনায় মাঠে নেমেছেন নেতারা।
এদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীদের সামপ্রতিক বক্তব্যেও দ্বাদশ সংসদ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে কিছু কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করেছেন তারা। তবে এবার আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ভুল পথে হাঁটবে না বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের খাতিরে জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলবে ঠিকই। তবে ভোটের ক্ষেত্রে এবার আলাদা জোট করবে না। দলের হাইকমান্ড থেকে এমনই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। সে লক্ষ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়নের জন্য আবেদনকারীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবাইকে দলীয় প্যাডে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত চিঠিও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, করোনায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে। কর্মীদের নিয়ে মাঠে থেকে কাজ করতে। এ ছাড়া সারা দেশের তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আবারো রাজপথে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলাই দলের লক্ষ্য। এ ছাড়া ২০২৩ সালের নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সমর্থনও আদায় করার চেষ্টা হবে। তাই কূটনৈতিক তদবিরের ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ থেকে ৪৩ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্ববরেণ্য প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের অন্ধকার যুগ থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আমি তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সংকটকালে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে জুলুম-নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। এই দিনে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যে সব নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতিও জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত যে সকল নেতাকর্মীরা আত্মদান করেছেন তাদের প্রতিও জানাই আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশ ও মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। এর ওপর করোনা মহামারির আক্রমণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের মানুষ। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি’র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমি দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মসূচি: দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এদিন সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা ১২টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে শহীদ জিয়ার মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, হেল্প ক্যাম্প ও করোনা রোগীদের সহায়তা প্রদান, দেশব্যাপী পোস্টার এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে একইভাবে আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।