বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ১৮ আগস্ট রাতের হামলা ও গুলির ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। একইসাথে ওই ঘটনায় সিসিটিভির পূর্ণাঙ্গ ফুটেজ প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরের কালীবাড়ি সড়কের সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেয়ারও নির্দেশ দেন। এ জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আরো বলেন, আগের মেয়রদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করতেন। কিন্তু এবার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেয়রের জন্য মানববন্ধন করলেন। তিনি বলেন, গত তিন দিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা গ্রেফতার ও হয়রানির আতঙ্কে কাজে যোগ দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমার দলীয় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাকে যদি গ্রেফতারের প্রয়োজন হয়, তাহলে আয়োজন করে বাড়ি ঘেরাও দিয়ে গ্রেফতারের দরকার নেই। নিজেই স্বেচ্ছায় চলে যাব।
প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, তিন বছর ধরে আমি সরকারি অনুদান পাই না। এটা আমি সাংবাদিকদের আগেই জানিয়েছিলাম। এর পেছনে গভীর চক্রান্ত আছে। বুধবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হলো।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, বরিশালের জনগণের দুর্ভোগের সমাপ্তি হোক। তারা কোনো দোষ করেনি। তাই নাগরিক সেবার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমার আহত নেতাকর্মীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দু’জন আহত কর্মী চোখ হারিয়েছেন। অনেকের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আপনারা দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপির ছেলে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কার বিরুদ্ধে দাঁড়াব? ক্ষমতায় আমার দল। এখানে আমি কঠিন হলে সেটা সরকারের ওপরে যাবে, দলের বদনাম হবে। বরিশাল শান্তির শহর। আমি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। নাগরিকরা ভালো থাকুক, এটাই চাই। এই কাজে ব্যর্থ হলে আমি রিজাইন দিয়ে চলে যাব।’
এ সময় মেয়র বুধবার রাতের ঘটনার পুরো সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশসহ ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নাইমুল হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে বুধবার রাতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নগরের কালীবাড়ি সড়কের নিজ বাড়িতেই (সেরনিয়াবাত ভবনে) অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরে যান।
উল্লেখ্য, সাদিক আবদুল্লাহ হচ্ছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি। বরিশালের আওয়ামী লীগ এখন সেরনিয়াবাত পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। তবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকপন্থীদের সাথে এই পরিবারের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই ১৮ আগস্ট রাতে বরিশালের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।