বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ মৃত্যুর ককটেল আর অনিশ্চিত গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সংঘাত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়পক্ষের মনোভাবও কঠোর হচ্ছে। কোন পক্ষই সমঝোতার চেষ্টা করতে প্রস্তুত নয়। দুই নেত্রী তাদের লক্ষ্য অর্জন করুন বা না করুন, বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে তারা বাংলাদেশকে প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। ভারতের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সম্পাদকীয়কে এসব কথা বলা হয়েছে। মৃত্যু ও ‘গণতন্ত্র’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, আংশিক উগ্র ও তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মৌলিক ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ জুড়ে বিরোধীদের প্রতিবাদে যেমনটা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে হত্যার অভিযোগে উসকানিদাতাদের বিচার করতে সমানতালে দৃঢ় সংকল্প রয়েছে সরকারের। বস্তুত, উভয়পক্ষই জানুয়ারি থেকে ‘ওভারড্রাইভ’-এ চলে গেছে। প্রহসনের এক নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এক বছর পূর্ণ করার পর থেকে এ পরিস্থিতির সূত্রপাত। বিএনপির নির্বাচন বর্জনে তাদের সহজ জয়টা ছিল লক্ষণীয়। আজ দেশটি প্রাণঘাতী মৃত্যুর ককটেল আর অনিশ্চিত গণতন্ত্রের সাক্ষ্য বহন করছে; যা এ মাসের ২১ তারিখ মহান একুশে উদযাপনকেও নিশ্চিতভাবে বিষণ্ন্নতায় ঘিরে ফেলেছে। কলকাতা ও ঢাকার মধ্যকার মৈত্রী এঙপ্রেসের যাত্রীরা অলৌকিকভাবে বেঁচে যান যখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চলমান প্রতীক- বিরোধীদের পেট্রলবোমা হামলার স্বীকার হয়েছিল। ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা বাসগুলোর ওপর একই রকম বোমা হামলায় ইতিমধ্যে যথেষ্ট মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। একদিকে যেমন সহিংস বিশৃঙ্খলা বেড়ে চলেছে, অপরদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়পক্ষেরই মনোভাব কঠোর হয়েছে। কোন পক্ষই সমঝোতার চেষ্টা করতে প্রস্তুত নয়। চলমান সহিংসতার সব থেকে পীড়াদায়ক বিষয় হলো- শিশুসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করার বিষয়ে বিএনপি’র কোন বিবেকের অস্বস্তিবোধ নেই। একইভাবে, ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগে আওয়ামী লীগের তাড়না প্রতিফলিত হয়েছে সপ্তাহান্তে। হাসিনা সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেগম জিয়ার দল ইসলামপন্থিদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে রয়েছে। গত দু’ দশকে দুই নেত্রীই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; মাঝে-মধ্যে সামরিক হস্তক্ষেপে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি সর্বশেষ নির্বাচনও সেনা’র বন্দুকের ছায়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়া কিছু মাত্রায় ছলনার নির্বাচনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু এক বছরের ভঙ্গুর শান্তির পর কোন বিষয়গুলো এমন উত্তেজনা আর সহিংসতা উসকে দিলো তা নিয়ে না ভাবাটা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী এটা না জ্ঞাত হয়ে পারেন না যে, এ আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য হলো তার উচ্ছেদ… ফান্ডামেন্টাল কোন এজেন্ডা অবলম্বন নয়। অতএব, যখন তিনি সন্ত্রাস বিরোধী আইন আর সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন তখন তিনি কোন না কোনভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন আর ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদের মধ্যকার গুরুতর পার্থক্য উপেক্ষা করছেন। উভয় নেত্রী তাদের নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেটাকে ‘সাইকেল অব ভায়োলেন্স’ বলে আখ্যা দিয়েছে, উভয় নেত্রী তার সমাপ্তি টানার লক্ষ্যে স্বপ্রণোদিত হয়ে সামান্যই পদক্ষেপ নিয়েছেন। দুই নেত্রী তাদের লক্ষ্য অর্জন করুন বা না করুন, বহির্বিশ্বের দৃষ্টিতে তারা বাংলাদেশকে প্রায় ব্যর্থ এক রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।