রক্তপাত এড়াতে দেশ ছেড়েছেন বলে ‘সাফাই’ দিয়েছিলেন। এ বার সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি জানিয়ে দিলেন, দেশে থাকলে হয় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলত তালেবান। নইলে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লার মতো পরিণতি হতো তার। ল্যাম্পপোস্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিত তালেবান। তবে চাপে পড়ে সাময়িক পিঠটান দিলেও, আফগানিস্তানে ফেরার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন বলেও জানালেন দেশবাসীকে।
রোববার তালেবানের হাতে কাবুল ছেড়ে পালানোর পর গত তিন দিনে গনির খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেষমেশ বুধবার জানা যায়, তিনি সংযুক্ত আমিরাতে রয়েছেন। মানবিকতার খাতিরে সপরিবার গনিকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানায় আমিরাত সরকার।
তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানবাসীর উদ্দেশে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন গনি। ফেসবুকে ৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে কাবুলকে সিরিয়া বা ইয়েমেন হতে দেয়া যাবে না। আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ওখানে থাকলে রক্তপাত ঘটতই। হয় আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলত তালেবান। নইলে আর এক প্রেসিডেন্টকে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলতে দেখতেন আফগানবাসী।’
গনি এবং তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান। সরকার গড়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে তালেবানের সাথে সমঝোতায় এগিয়ে এসেছেন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। গনি-বিরোধী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহও তালেবানের সাথে বোঝাপড়ায় নেমেছেন।
কারজাই ও আবদুল্লাহ, দু’জনের সাথেই তিক্ত সম্পর্ক গনির। কিন্তু আফগানবাসীর স্বার্থে তাদের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। গনির বক্তব্য, ‘আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের মধ্যস্থতায় সরকার গঠনের এই প্রয়াসে আমার সমর্থন রয়েছে। আমি চাই এই প্রয়াস সফল হোক। আফগানিস্তানে ফিরতে নিজেও কথাবার্তা চালাচ্ছি, যাতে আফগানবাসী ন্যায়বিচার পান। সত্যিকারের ইসলামিক এবং জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধের জয় হয়।’
গনির উপস্থিতিতে তার সরকারের উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ্ নিজেকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন। তালিবানের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতে নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। তবে গনি নিজে ক্ষমতায় ফেরার কোনো ইঙ্গিত দেননি। বরং কারজাই ও আবদুল্লাহর মধ্যস্থতায় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠুভাবে মেটে, তার উপরেই জোর দিয়েছেন।
তবে তালেবানের পুনরুত্থানে যে অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার জন্য নিজের সরকারের শীর্ষ আমলা, কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক মহলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন গনি। জানিয়েছেন, তালেবান কাবুলে ঢুকবে না, এমন চুক্তি সেরে রাখা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও রোববার বিকেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে খবর দেন যে প্রেসিডেন্ট ভবনের ফটক পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন তালেবান। গনির কথায়, ‘এটা আফগান সেনার ব্যর্থতা নয়। আমার সরকারের প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং আন্তর্জাতিক মহলের ব্যর্থতা।’
কাবুল থেকে চপার ভর্তি নগদ টাকা নিয়ে গনি পালিয়ে গিয়েছেন বলে এর আগে রাশিয়ার তরফে দাবি করা হয়েছিল। তা-ও উড়িয়ে দিয়েছেন গনি। বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল পেরিয়ে তিনি আমিরাতে প্রবেশ করেছেন, সাথে টাকা থাকলে তা ধরা পড়ে যেত বলে দাবি করেছেন তিনি। গনির কথায়, ‘আমি শুধু পরনের কয়েকটা জামাকাপড় নিয়ে এসেছি। নিজের লাইব্রেরির একটা বই পর্যন্ত আনতে পারিনি।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও আল জাজিরা