তালেবানরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর গতকাল সোমবার প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। শহরের প্রতিটি রাস্তায় সশস্ত্র তালেবানদের অবস্থান লক্ষ করা গেছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ি বাড়ি লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে কাবুলবাসী গভীর অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তবে রাজধানীর কোনো কোনো স্থানে স্বাভাবিক জীবনযাপনও দেখা গেছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
বিবিসির ভিডিও সাংবাদিক মালিক মুহাছছির কাবুলের ভেরের চিত্র সম্প্রচার করেছেন। তিনি জানান, শহরের সর্বত্র তালেবান। তালেবানরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছু গাড়ি তল্লাশি করছে। বিশেষ করে যেসব গাড়ি পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ব্যবহার করত, সেসব গাড়িতে বেশি তল্লাশি করা হয়েছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত সব গাড়ি তালেবানরা নিয়েছে। ওই সাংবাদিক আরও বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলের জীবনযাপন স্বাভাবিক। ট্রাফিক জ্যাম নেই। বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। গতকালের চেয়ে (রবিবার) সাধারণ মানুষকে শান্ত দেখাচ্ছে কিন্তু সবার মধ্যেই ভীতি রয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনি দুই নারীকে রাস্তায় দেখেছেন, যারা মুখ ও মাথা বোরকা দিয়ে ঢেকে বের হয়েছেন। রাস্তায় কোনো গানবাজনা শোনা যায়নি। ওই সাংবাদিকের ভাষায়Ñ আমি একটি হোটেলে ছিলাম, যারা সব সময় সংগীত বাজাত; কিন্তু এখন তারা বন্ধ রেখেছে। মানুষ আতঙ্কিত কিন্তু জীবন যাত্রা চলছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু বিমানবন্দরের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে পরিবার, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ কাবুল ছাড়তে উপচে পড়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক খবরে জানিয়েছে, তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখানে বাড়িঘরে লুটপাট হয়েছে। বিবিসির খবরে, গতকাল সোমবার সকালেও বাড়ি বাড়ি লুট হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু স্থানে গোলাগুলির শব্দও শোনা গেছে।
কাবুলের বাসিন্দা আয়শা খুররাম। তিনি শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার সকালে এক টুইটে তিনি জানান, গুলি ও চিৎকার-চেচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙেছে। কিছু মানুষ বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এসব বাড়িতে থাকা গাড়ি ও বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তালেবান যখন এলাকায় যাচ্ছেন, তখন তারা পালাচ্ছেন। তিনি ওই টুইটে বলেন, বিশৃঙ্খলা সবে শুরু। এসব লুটপাট কে বা কারা করেছে তা জানা যায়নি।
রবিবার দিনের শুরুতে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, রক্তপাত এড়াতে তারা কাবুলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। কিন্তু রাতে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, লুটপাট ঠেকাতে তারা কাবুলে প্রবেশ করেছে। কাবুল দখলের শুরু থেকেই তালেবান আসছে বলে তারা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। এমনকি যারা আফগান সরকারে হয়ে কাজ করেছেন, তাদেরও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন তারা। কিন্তু তালেবানের এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেক কাবুলবাসী।