দুই দফা ছয় দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত ও সমালোচিত নায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তার জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন আইনজীবী মো. মজিবর রহমান। পরে বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরী আবেদনটির শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
আইনজীবী মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘আমরা জামিন আবেদন দ্রæততার সঙ্গে শুনানির জন্য বিশেষ আবেদন দাখিল করেছিলাম। আদালত ১৮ আগস্ট সেটি শুনানির জন্য রেখেছেন। আশা করছি, ওইদিন আদালত আমাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করবেন।’
এর আগে গত ১৩ আগস্ট পরীমনি ও তার ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপুকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন নতুনভাবে তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন ছিল না। তবে আসামিরা জামিন পেলে তদন্ত বিঘিœত হতে এবং তারা পালিয়ে যেতে পারেন, এমনটা উল্লেখ করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা এও উল্লেখ করেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামিরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। তাই মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
অপরদিকে পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সৌরভী ও মজিবর রহমান আদালতে জামিন আবেদন করে বলেনÑ পরীমনি ‘ভারটিগো’ এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর রোগী। তিনি দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে (হেফাজতে) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া তিনি একজন প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে পরীমনির নাম রয়েছে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য গৌরবের। তাই আসামি পরীমনির জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে এই নায়িকার যে চুক্তি হয়েছে তা ভঙ্গেরও সম্ভাবনা রয়েছে। স¤প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক একটি সরকারি অনুদানের সিনেমার জন্যও তার ফটোশুট করা হয়েছে। তাই জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরে আসামির জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পরীমনি ও তার ম্যানেজারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বনানীর বাসায় গত ৪ আগস্ট অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তার ম্যানেজার ও স্বজন আশরাফুল ইসলাম দীপুকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বাসা থেকে বিদেশি মাদকদ্রব্য জব্দ করার কথা জানায় র্যাব। পরে ওই ঘটনায় র্যাব ১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে একটি মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়Ñ পরীমনি এসব মাদকদ্রব্য কবির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। তবে এই চিত্রনায়িকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানতে পারে, তিনি মূলত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ধারায় পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদÐ হতে পারে।