ঢাকাঃ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিফ। করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। ভর্তি করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। দুইদিন চিকিৎসা চলে সেখানে। একপর্যায়ে তার অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন আইসিইউতে ভর্তি করার। কিন্তু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। তিনি যোগাযোগ করেন বেশ কয়েকটি হাসপাতালে।
সর্বত্র একই অবস্থা। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে ভর্তি করান। একপর্যায়ে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। ওই হাসপাতালে চারদিনেই বিল আসে প্রায় চার লাখ টাকা।
আরিফ মানবজমিনকে বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তেমন কোনো টাকাই লাগেনি। ধানমন্ডির ওই হাসপাতালে বড় অঙ্কের বিলের পাশাপাশি চিকিৎসা নিয়েও আমাকে ভুগতে হয়েছে। চিকিৎসদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলারই সুযোগ পাইনি। কখনোই তারা আব্বার শারীরিক অবস্থার কথা বিস্তারিত জানায়নি। পরে তো আব্বাকেই আমরা হারিয়ে ফেলি চিরতরে।
আরিফের মতো পরিস্থিতি বহু মানুষের। কালান্তক করোনা শুধু মানুষের জীবনই নয়, অর্থনৈতিক সঙ্গতিও তছনছ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারছেন না মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষেরা। বিশেষ করে করোনার চিকিৎসায় এমন কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে যেগুলোর দাম অত্যন্ত বেশি।
শ্বাসকষ্ট অুনভব করায় গত ৫ই জুলাই মা’কে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন রোকনুজ্জামান পিয়াস। সরকারি হাসপাতালে সিট না পেয়ে নিয়ে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, তিনি করোনায় আক্রান্ত। আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শমতো রোগীকে নেয়া হয় আইসিইউতে। যদিও পরদিন করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু ওই হাসপাতালে এক রাতের আইসিইউ’র বিল আসে এক লাখ পনেরো হাজার টাকা। রোকনুজ্জামান পিয়াস বলেন, মা’কে পরে আমরা অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই।
এদিকে করোনা আক্রান্ত ভাইকে বাঁচাতে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন আবুল কালাম। প্রথমে নোয়াখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে সিট না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান ভাইকে। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে দুইদিন আইসিইউ’র বিলই আসে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
আবুল কালাম মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কোনো উপায় না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখানে দুইদিনে আইসিইউ’র বিলই আসে অনেক টাকা। আর অন্যান্য খরচতো আছেই। আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে এতো টাকা বহন করাতো অসম্ভব। আমাদের জন্য আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউই নেই।
বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, বিভিন্ন দামি ওষুধ, অক্সিজেনসহ নানা কারণে করোনার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। এমন খরচ অনেকের জন্যই বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে সরকারিভাবে যদি বেসরকারি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে হয়তো এর খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
ওষুধ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, নরমাল রোগীদের জন্য কম ওষুধ লাগলেও ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। এতো খরচ অনেক রোগীরই বহন করার সামর্থ্য থাকে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, রোগী আইসিউতে থাকলে খরচ বেশি আসবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমার জানা মতে, বেসরকারি হাসপাতালে একদিনে আইসিইউ’র বিল ৪০ হাজারের বেশি আসার কথা না। তার বেশি হলে এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু্ই নয়। সরকারকে এই বিষয়ে অবশ্যই নজর দেয়া উচিত।