বহুল আলোচিত নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে বেশ বিপাকেই আছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন। একই ফ্ল্যাটে দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা ওই নায়িকার সঙ্গে কাটানোর বিষয়টি সামনে আসার পর বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছেন চৌকস এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গত শনিবার তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ থেকে বদলি করা হয় পিওএম পশ্চিমে। এ ঘটনায় বেশ বিব্রত হয়েছে পুরো পুলিশ বাহিনীও। এর পরদিনই বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি-ট্রেনিং) মিয়া মাসুদ করিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর।
এদিকে আগুনে ঘি ঢালার মতোই ঘটনা ঘটে গেছে মঙ্গলবার। এবার ভাইরাল হয়েছে পরীমনি ও সাকলায়েনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি ভিডিও। জন্মদিনের একটি অনুষ্ঠানে তোলা ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি কেক কেটে জড়িয়ে ধরে তা
এডিসি সাকলায়েনকে খাইয়ে দিচ্ছেন পরীমনি। বারবার উভয়েই বলছিলেন- ‘হ্যাপি বার্থ ডে, টু ইউ। হ্যাপি বার্থ ডে, টু ইউ।’ শুধু তাই নয়, আনন্দঘন সেই পরিবেশে চুম্বনরত অবস্থায়ও দেখা গেছে উভয়কে।
সাকলায়েন-পরীমনির কথিত এই প্রেম কাহিনীর বিষয়টি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করছে ডিএমপি সদর দপ্তরও। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য ও তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এডিসি গোলাম সাকলায়েনকে সাময়িক বরখাস্ত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। তদন্ত শেষে চলতি সপ্তাহেই এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। এর কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের বক্তব্যেও। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে জড়িয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের ঘটনায় পুরো পুলিশ বাহিনী বিব্রত। সাকলায়েনের মতো একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এ ধরনের একটি অনৈতিক সম্পর্কে জড়াবেÑ এটি কখনই প্রত্যাশিত নয়। সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির এই মামলায় কোনো সম্পর্ক নেই। বোট ক্লাবের যে মামলাটি (হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টা) হয়েছে সেটি ঢাকা জেলায়। সেই মামলা তদন্তের জন্য ডিএমপি ডিবির কোনো অফিসারের সম্পর্ক নেই। এডিসি সাকলায়েন যেহেতু পরীমনির কোনো মামলা তদারকির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, সঙ্গত কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনে এটি অপরাধ না, কিন্তু চাকরিবিধিতে অপরাধ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। চাকরিবিধি আর আইন আলাদা। ফলে মামলা হবে না। তাকে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) থেকে বদলি করা হয়েছে। বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা ভঙ্গের কারণে সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরীমনির ঘটনার পর আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে পুলিশ একটু নড়েচড়ে বসেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড আমাদের সামনে এসেছে। তদন্ত করে আমরা দেখলামÑ অনেক অনৈতিক কাজ হচ্ছে। তখন আমরা একটি অভিযানে গেলাম। এ ধরনের কার্যকলাপ যদি চলে তা হলে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি বড় ধরনের অপরাধ হলেও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এটি খুব ছোট একটি অপরাধ।’ রিমান্ডে নাম বলা ও তালিকা তৈরির বিষয়ে সমাজের প্রতিষ্ঠিত কিছু ব্যবসায়ীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ কিংবা সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো তালিকা করা হচ্ছে না। আমি নিজে সিআইডিপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও বলেছেনÑ তালিকা তৈরির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের কাজ পুলিশের কোনো সংস্থা করছে না।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, চলতি বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চিত্রনায়িকা পরীমনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন, ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন তাকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছেন।’ এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে তিনি সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। পরীমনির ওই মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এই দুটি মামলার কোনোটির তদন্তে সাকলায়েন জড়িত না থাকলেও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তিনি সরকারি চাকরিবিধির শৃঙ্খলা ভেঙেছেন বলেও ডিএমপি কমিশনার জানান।