ঢাকাঃ অনেক প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তির গোপন তথ্য জানেন পরীমণি ও পিয়াসারা। ব্ল্যাকমেইলের কাজে এসব তথ্য ব্যবহার করতেন তারা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। এ দিকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসের ভয়ে আছেন অনেক প্রভাবশালী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রভাবশালীদের একজনের সম্পর্কে ডায়মন্ড ও সোনা চোরাচালানের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন মডেল পিয়াসা। ওই ব্যবসায়ীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্বীকার করে পিয়াসা জানিয়েছেন, গুলশানে ওই ব্যবসায়ীর আলাদা একটি বাসা রয়েছে। ওই বাসায় কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ থাকেন না। মাঝে মধ্যেই ওই বাসায় রাতের রঙ্গশালা জমে উঠতো। সেখানে থাকতেন অন্য একটি দেশের অনেক নাগরিক। আর পুরো পার্টির মদ পরিবেশনের আগে খাবারদাবার সরবরাহ করতেন বাসার কেয়ারটেকার রাজিয়া। এই ব্যবসায়ীর সাথে পিয়াসার অতিঘনিষ্ঠ ছবি ও মোবাইল ফোনে পিয়াসার সাথে কথোপথনের রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে। ঢাকায় তার বেশ কয়েকটি জুয়েলারি ও ডায়মন্ডের শোরুম আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আপতত ১৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তারা মাঝে মধ্যেই পরীমণি ও পিয়াসার রাতের আসরের অতিথি হতেন। তাদের নিয়ে যেতেন লং ড্রাইভে। নানা ধরনের অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে গেছেন এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা। পরী-পিয়াসার মাধ্যমে ফঁাঁদ পেতে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিতেন চক্রের প্রভাবশালী সদস্যরা। এ কাজে পিয়াসার অধীনে ২০-২৫ জন অনিন্দ্য সুন্দরী রমণী রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এদের সবার নামও বলেছেন নায়িকা পরীমণি ও মডেল পিয়াসা। শোবিজ জগতের আলোচিত এই দুই তারকার সাথে এসব বিত্তশালীর মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড ও অনেক স্থিরচিত্র পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি দু’টি ব্যাংকের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, একজন মিডিয়া হাউজের মালিক, একজন ডায়মন্ড জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও একজন প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এদের সম্পর্কে পরীমণি ও পিয়াসার দেয়া অনেক তথ্য এরই মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা মিলেছে। এদের প্রায় সবার সাথে পিয়াসা ও পরীমণির মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। এ ছাড়া রিমান্ডে থাকা আসামি পরীমণি, পিয়াসা, নজরুল রাজসহ অন্যদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন থেকে প্রাথমিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার একটি সিনেমা হলের টিকিট চেকার ও জুয়েলারি ব্যবসায়ী স্বর্ণ ও ডায়মন্ড চোরাচালানির মধ্য দিয়ে এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।
ওই চোরাকারবারি এক দিন মদ্যপ অবস্থায় পিয়াসাকে বলেছিলেন, তিনি একটি ব্যাংকের কর্ণধারের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ডায়মন্ড ব্যবসা করেন। এই সুদের টাকা শোধ করতেই তাকে চোরাকারবারি হতে হয়। এমন অনেক তথ্যই পিয়াসার কাছে ছিল, যা দিয়ে পিয়াসা ওই চোরাকারবারিকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন।
সূত্র আরো জানায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ফার্নিচার কোম্পানির মালিকের এক ছেলের সাথে পিয়াসার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যেই পিয়াসার আসরে হাজির হতেন তিনি। পিয়াসার নারী নেটওয়ার্কের সদস্যদের দিয়ে তিনি নানা অপকর্মেও জড়িত। তার সাথে পিয়াসার নাচের ভিডিও ও মোবাইল কথোপকথনের রেকর্ড পাওয়া গেছে পিয়াসার মোবাইল ফোনে। দেশের একটি বহুজাতিক কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরীমণির ঘনিষ্ঠ আলাপ-আলোচনার রেকর্ড পাওয়া গেছে। কথোপকথনে পরীমণির সাথে তার অতিঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। এ ছাড়াও গুলশানের একটি অভিজাত ফ্যাশন হাউজের মালিকের স্ত্রীর সাথে ছিল পিয়াসা ও মৌর অতিঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ফ্যাশন হাউজের মালিকের ওই স্ত্রীর সাথে একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তার পরকীয়া চলছিল। এটাকে পুঁজি করে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ পেতেছিলেন পিয়াসা ও মৌ। ব্ল্যাকমেইল করে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার লোন পেতেও পিয়াসার সিন্ডিকেটের নারীদের ব্যবহার করা হতো বলে তদন্তকারীদের তথ্য দিয়েছেন পিয়াসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি আরো যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যকর। সম্প্রতি এক সিনিয়র রাজনৈতিক নেতার সাথে রাজের গাড়িতে চড়ার ছবি প্রকাশিত হলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, রাজসহ প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জব্দ করা আলামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তদন্তের এই পর্যায়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না।