ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হেলেনা জাহাঙ্গীরের আরও ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যার মধ্যে প্রতারণা অবৈধ ‘জয়যাত্রা’ টিভির মামলায় গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান চার দিন করে ৮ দিনের ও এবং মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী মাদক ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিন দিন করে ৬ দিনের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৩০ জুলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হেলেনার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে এদিন দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে আরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এদিন পল্লবী থানার প্রতারণার মামলায়ও হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। এছাড়া গত ৩১ জুলাই মাদক মামলায় পাঁচ দিন এবং পল্লবী থানা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায়ও সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
পল্লবী থানার দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট জিআরের নিবন্ধন কর্মকর্তা শুনানি করেন। তবে গুলশান থানার দুই মামলায় ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিনি বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর ফেসবুকে মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে অ্যাড আছেন তিনি। দেশের যে পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’
হেলেনা জাহাঙ্গীরের পক্ষে তার আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলায় রিমান্ড তো দূরের কথা, তার জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। মহিলা মানুষ, তিন দিনের রিমান্ডে ছিলেন। আর যিনি মামলা করেছেন তার মানহানি হয়নি। যাদের কথা বলা হয়েছে মানহানি হয়েছে তারা তো মামলা করেননি। এতদিন কিছু হলো না। একটু বিরাগভাজন হলাম আর এ অবস্থা হলো।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তার বক্তব্য দেশের বিরুদ্ধে। দেশের বিরুদ্ধে যারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে তাদের সাথে তার সম্পর্ক।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পৃথক চার মামলায় তার ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আআগে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১’র অভিযানে গত ২৯ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ি ‘জেনেটিক রিচমন্ড’-এ অভিযান পরিচালনা করে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ১ টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ১টি হরিণের চামড়া, ২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশি মুদ্রা, ২টি ওয়াকিটকি সেট এবং জুয়া (ক্যাসিনো) খেলার সরঞ্জামাদি- ৪৫৬টি চিপস জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে রাতেই র্যাব-৪ বিটিআরসির সহযোগিতায় মিরপুরে অবস্থিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশন সিলগালা করে এবং অবৈধ মালামাল জব্দ করে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের পোস্টার ভাইরাল হলে আলোচনায় উঠে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোস্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়। এরপরই আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হয়।