কোন হাসপাতালে সিট আছে প্রচার হলে রোগীদের রাস্তায় ঘুরতে হয় না

Slider জাতীয়


করোনার এই বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে স্বজনরা অসুস্থ আপনজনদের নিয়ে ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে ঘুরছেন। সিট না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। মানুষকে সহজেই এই হয়রানি থেকে মুক্তি দেয়া যায়, প্রতিদিন সকালে কোন হাসপাতালে কী ধরনের কতগুলো সিট খালি আছে তা রেডিও-টিভিতে খবরের মধ্যে বলে দেয়ার মাধ্যমেই। তাছাড়া রেফারেল সিস্টেম চালু করতে পারলে উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল থেকেই টার্শিয়ারি হাসপাতালে একটি সিট পেয়েই মানুষ শহরের দিকে রওনা দিতে পারে। নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকালে বিশিষ্ট মেডিক্যাল শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সাজার্রি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং একই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন ছিলেন।

নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, করোনার পিক দেখার জন্য হয়তো আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। করোনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট) খুবই দ্রুততার সাথে মানুষকে সংক্রমিত করে থাকে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ আর কত দিন চলবে তার পূর্বাভাস কেউ করতে পারছে না। ফলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ আরো চলবে এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যেতে হবে। হাসপাতালে রোগীরা শেষ সময়ে আসছেন। দেরি করে আসার জন্য অনেক জীবন বাঁচানো যাচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘মানুষ কখন হাসপাতালে আসবে সে কথা তো স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে না। তাহলে মানুষ কি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর পরই হাসপাতালে চলে আসবে? শেষ দিকে আসার পরই হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না, কিন্তু রোগের শুরুতে আসলে কী অবস্থা হবে তাতো বলাই বাহুল্য। এখনই হাসপাতালে ‘কর্মখালি নাই’-এর মতো নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, ‘আইসিইউ বেড খালি নাই, সাধারণ বেড খালি নাই’ বলে। রোগী আরো বাড়লে তখন কী হবে তাতো অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয়হীনতা ও উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনা হচ্ছে অনেক দিন হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার যথেষ্ট সক্ষমতা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। দেখা যাচ্ছে মানুষ করোনা পরীক্ষার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও করোনা পরীক্ষা করাতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, এই মহামারী মোকাবেলা করার এখনো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি সরকার।
লাইনে দাঁড়িয়ে করোনার পরীক্ষার পদ্ধতিটি বৈজ্ঞানিক নয় বলে জানান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষার জন্য অসুস্থ ব্যক্তিদের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে, যা খুবই অমানবিক।

এখানে কেউ যদি করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকেন তাহলে তার থেকেইতো অন্যরা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। একটা টোকেনের ব্যবস্থা করে দিলেই মানুষগুলো নিরাপদ স্থানে অথবা নিজ ঘরে অথবা বাসায় অপেক্ষা করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে এসে নমুনা দিয়ে চলে যেতে পারেন। করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে এসে মানুষের সাথে আরেকটি অমানবিক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, অসুস্থ মানুষগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে অপেক্ষা করেন কিন্তু দিন শেষে তাদের পরীক্ষা না করে বলে দেয়া হচ্ছে আজ আর পরীক্ষা করা হবে না। এই অমানবিক ব্যাপারগুলো পরিহার করা যায় খুব সহজেই।

অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, লকডাউন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করবে, না টিকা দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করবে এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এক সময় টিকা ছিল না। এখন হয়তো সরকারের কাছে যথেষ্ট টিকার সংস্থান আছে। সে কারণে সরকার গণটিকা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। তিনি জানতে চান, টিকার সরবরাহ যদি যথেষ্ট থাকে এবং গণটিকা প্রদান কর্মসূচি পালন করার যদি পরিকল্পনাই থাকে তাহলে বেলা ২টার পর কেন টিকা দেয়া বন্ধ থাকছে? তিনি মনে করেন, টিকা প্রদান কর্মসূচি ২৪ ঘণ্টাই থাকা উচিত, নিদেন পক্ষে রাত পর্যন্ত এই সুবিধা রাখা যায়, যেন নাগরিকরা যখনই সময় পাবেন তখনই টিকা নিয়ে নিতে পারেন।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, মাস্ক পরার ব্যাপারে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না? এই ছাত্ররা নিজেরা মাস্ক পরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে মাস্ক পরতে। কারো মাস্ক না থাকলে তারা একটি মাস্ক দিয়ে তাকে ভবিষ্যতে মাস্ক পরে বাইরে বেরুতে উৎসাহিত করতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্ররাইতো অতীতে সচেতনতা সৃষ্টি করার ভালো নজির স্থাপন করেছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের নিয়ে স্বজনরা গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসছেন বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরিচিত ঢাকায় এসে তারা অনেক কিছুই বুঝতে পারছেন না। কোন হাসপাতালে সিট আছে তারা তা-ও জানেন না। কিন্তু উপজেলা হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতাল থেকেই এ ব্যবস্থাটা করে দিতে পারে। প্রথমে রোগীদের উপজেলা অথবা জেলা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সেখানে উন্নত চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকলে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য টার্শিয়ারি হাসপাতালে পাঠাবেন। সে জন্য রেফারেল সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে পারলে উপজেলা বা জেলা হাসপাতাল থেকে রোগীদের রেফার করে দেবেন এবং উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল থেকেই ওই রোগীর জন্য টার্শিয়ারি হাসপাতালে একটি সিট ম্যানেজ করে দেবেন। রেফারেল সিস্টেম থাকার কারণে রোগীরা সোজা নির্দিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে কাগজ দেখিয়ে ভর্তি হয়ে যাবেন। এই ব্যবস্থাটি করতে পারলে রোগীদের ভোগান্তি কমে যাবে। এই রেফারেল সিস্টেম চালু করা হলে প্রয়োজন না থাকলে রোগীরা টার্শিয়ারি হাসপাতালে ভিড় করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *