করোনায় আক্রান্ত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন মা। একই হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তার ছেলে। একপর্যায়ে ছেলের অবস্থার অবনতি ঘটলে আইসিইউর প্রয়োজন হয়।কিন্তু হাসপাতালে আর আইসিইউ বেড খালি নেই। এমনকি সারা চট্টগ্রামের কোথাও মেলেনি আইসিইউ শয্যা।
মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে শুয়ে থাকা মায়ের কানে খবরটা যেতেই ছটফট করতে থাকেন মা। বৃদ্ধা মা ইশারায় চিকিৎসকদের ডেকে ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।চিকিৎসকরা বোঝানোর চেষ্টা করেও মাকে ওই অবস্থান থেকে সরাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে মাকে নামিয়ে আইসিইউ বেডে তোলা হয় ছেলেকে। এর এক ঘণ্টার মাথায় করোনার কাছে হার মানেন মা।
মায়ের জীবন ত্যাগের মধ্য দিয়ে আইসিইউ শয্যা মিললেও এখন ছেলের প্রাণও যায় যায়। তবে মুমূর্ষু অবস্থায় এখনো বেঁচে আছেন ছেলে।
আইসিইউ সঙ্কটে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম বলেন, ‘মা ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দেন। কিছুক্ষণ বাদে মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর ছেলের অবস্থার আরও অবনতি হয়। তিনি এখনও আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তবে খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কানন প্রভাপাল (৬৫)ও তার ছেলে শিমুল পাল (৪৩)হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন মায়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে হাসপাতালে তাৎক্ষণিক খালি থাকা একটি আইসিইউ বেডে তাকে স্থানান্তর করা হয়।
এর মধ্যে বুধবার সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে ছেলের শারীরিক অবস্থাও। চিকিৎসকরা ছেলেকে আইসিইউতে স্থানান্তরের পরামর্শ দিলেও জেনারেল হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি পাওয়া যায়নি। আইসিইউ বেডে থাকা মা তখন ছেলের জন্য নিজের আইসিইউ বেড ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান চিকিৎসকদের। পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে মাকে সাধারণ বেডে নামিয়ে ছেলেকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে সাধারণ বেডে আনার এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান মা। ছেলেকে বাঁচাতে এমন আত্মত্যাগ মা ছাড়া আর কে করতে পারে!
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রধান ডা. আব্দুর রব জানান, বুধবার এই হাসপাতালে আরেকটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা ও ছেলে মারা গেছেন এই হাসপাতালে।