ঢাকা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডের সামনে দু’-এক মিনিট পরপর আসছে কোভিড আক্রান্ত রোগী বহন করা এম্বুলেন্স। হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেকেই অন্য হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সামনেই দু’জন ভলান্টিয়ার রোগীদের সাহায্য করতে ছোটাছুটি করছেন। কথা হয় ভলান্টিয়ার সাদিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের দম ফেলার সময় নেই। সকাল থেকে অসংখ্য করোনা রোগী হাসপাতালে এসেছেন। যাদের মধ্যে কারো অবস্থা সংকটাপন্ন। কেউ আবার অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করছেন।
আমরা যেহেতু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে কাজ করি তাই হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিশেষ করে ভর্তি সংক্রান্ত কোনো ধরনের সহযোগিতা করার সুযোগ নেই আমাদের। রোগীকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে আনা-নেয়া, গাড়িতে তুলে দেয়া, জরুরি ওধুষ ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি আমরা। সরজমিন ঢাকা মেডিকেলে এমন চিত্র দেখা যায়।
ঢাকা জেলার দোহার থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন জলিল মিয়া। বয়স ৭০ বছর। গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জলিল মিয়ার মেয়ে জামাই বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে করোনা আক্রান্ত হলে তাকে তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করি। তার শারীরিক অবস্থা ভালোই ছিল। হঠাৎ করে গতকাল সকালে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে আমরা হাসপাতালে আইসিইউ’র জন্য ছোটাছুটি করি। সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে কিছুক্ষণ আগে তিনি মারা যান। ৬১ বছর বয়সী রমিজউদ্দিন সম্প্রতি কিডনি জটিলতায় ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন। অক্সিজেন লেভেল ওঠানামা করায় চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। রমিজউদ্দিনের ছেলে বলেন, প্রথমে ডিএনসিসি হাসপাতালে গেলে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে কুর্মিটোলা হাসপাতালে যেতে বলেন।
কুর্মিটোলা থেকে তাদেরকে মুগদা হাসপাতালে পাঠায়। মুগদা থেকে পুনরায় ডিএনসিসি হাসপাতালে পাঠালে অনেক চেষ্টা-তদবির করে ভর্তির ব্যবস্থা হয়। বরিশালের মুলাদী উপজেলা থেকে করোনা আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন জোনদার আলী। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলের সাবেক স্টাফ তিনি। বর্তমানে অবসরে আছেন। স্ত্রী ফিরোজা বেগম সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হলে তার অক্সিজেন স্যাচ্যুরেশন কমে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছেন। হাসপাতালের পুরাতন স্টাফ হলেও শয্যা সংকটের কারণে স্ত্রীকে ভর্তি করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোভিড ওয়ার্ডে একেতো শয্যা সংকট তার উপরে অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। যখন-তখন রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে।
গাজীপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন করোনা আক্রান্ত শাহিনউদ্দিন। অনেক চেষ্টার পরে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করতে পারলেও আইসিইউ না থাকায় ঢাকা মেডিকেল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে তার পরিবার। কথা হয় শাহিনউদ্দিনের ছেলে সুমনের সঙ্গে। সুমন বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আব্বুর প্রচণ্ড জ্বর। করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ এলে কোনো কিছু চিন্তা না করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে তার হাত-পা বাঁকা (খিঁচুনি) হয়ে যাচ্ছিল। ডিউটিরত চিকিৎসক জানায় তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউ বেড খালি না থাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকা মেডিকেলের শয্যা সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোভিড ওয়ার্ডে এখন মাত্র নন-অক্সিজেন পাঁচটি বেড খালি আছে। শয্যার বিপরীতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় রোগী ভর্তি করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ সবসময়ই বেশি থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শয্যা খালি আছে ততক্ষণ আমরা কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেই না।