উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সরকারের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ভালো। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ঈদের আগে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। তবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণ কমেছে। আজকে (শুক্রবার) থেকে যে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে, সেটি কয়েক দিন গেলে বোঝা যাবে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।

এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৬ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৮৫১ জনে। এর মধ্যে গত ২২ দিনেই মারা গেছে ৪ হাজার ৩৪৮ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে কোনো মাসে এতসংখ্যক মানুষ মারা যায়নি। এর আগে গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৪ জন। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পিকটাইমে গত বছরের জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৪ হাজারের বেশি শনাক্ত এবং একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১৩ হাজারের বেশি শনাক্ত এবং সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনার মাসভিত্তিক মৃত্যু চিত্র বলছে, গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই মাসে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। এর পরের মাস এপ্রিলে ১৬৩ জন, মেতে ৪৯২, জুনে ১ হাজার ১৯৭, জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪, আগস্টে ১ হাজার ১৭০, সেপ্টেম্বরে ৯৭০, অক্টোবরে ৬৭২, নভেম্বরে ৭২১ এবং ডিসেম্বরে ৯১৫ জন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যায় ৫৬৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১, মার্চে ৬৩৮, এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪, মেতে ১ হাজার ১৬৯, জুনে ১ হাজার ৮৮৪ জন। চলতি (জুলাই) মাসের গেল ২২ দিনেই মারা গেছে ৪ হাজার ৩৪৮ জন।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর লাগাম টানতে ১ জুলাই থেকে দেশে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। ওই দিন থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। ১৪ দিনের লকডাউন শেষে সরকার ঈদ উপলক্ষে ৫ দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করে। তখন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে লকডাউন শিথিল না করার পরামর্শ দেন। ঈদ উপলক্ষে মানুষের এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমন প্রেক্ষাপটে করোনার লাগাম টানতে গতকাল শুক্রবার থেকে আবার ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে।

করোনার মৃত্যু পরিস্থিতির চিত্র বলছে, করোনার মৃত্যু দিনে দিনে বাড়ছে। চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে একদিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০-৪০ জন। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে (১ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত) করোনায় মোট মারা গেছে ২৫০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের বেশি। আর এক মাসের ব্যবধানে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দিনে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-২০০ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে (১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত) মোট মারা গেছে ১ হাজার ৯০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫৫ জনের বেশি। জুলাই মাসের এই সপ্তাহে (১৬ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত) মারা গেছে ১ হাজার ৫৭৩ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মারা গেছে ১৯৭ জনের বেশি।

জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়াতে থাকলে তা প্রতিরোধে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা পরবর্তী সময় কয়েক দফায় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পর রোজার ঈদ সামনে রেখে ৬ মে থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়, আর তখনই মানুষ বাড়ি যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় এবং ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের কারণে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পরে তাদের পূর্বাভাষ বাস্তবে পরিণত হয় এবং রোজার ঈদের প্রায় ২ সপ্তাহ পর জুন মাসের শুরু থেকে সারাদেশেই করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথমে সীমান্তবর্তী ও তার আশপাশে সংক্রমণ বাড়লেও ধীরে ধীরে দেশের শহর-গ্রাম সবখানেই এর বিস্তার ঘটে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথমে সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। একপর্যায়ে রাজধানীকেও সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাস না পাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবারও কোরবানির ঈদের কারণে লকডাউন শিথিল করে। এতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৪৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৪ জন। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ৭৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ জন। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১৬৬ জন। এই সময়ে আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ জন এবং ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ২৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭৭ হাজার ২৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৭ জন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫১ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৭ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *