এখনো শুরু হয়নি কোরবানি পশুর হাট। এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে কোরবানি পশু। আগামী ১৭ই জুলাই থেকে রাজধানীর ১৮টি অস্থায়ী পশুর হাটে বিক্রি হবে এসব পশু। ভালো দামের আশায় সড়ক পথ ও নৌ-পথে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাটে তোলা হচ্ছে এসব গবাদিপশু। তবে ঢাকায় এসব গরু আনতে গিয়ে পথে পথে বাধা, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে। রাজধানীতে এ বছর হাটের সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। এদিকে অনলাইনে কোরবানি পশু কিনতে উৎসাহিত করেছেন সরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল পশুর হাটে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। এর মধ্যেও গত কয়েকদিনে রাজধানীতে যে হারে গরু এসেছে, তাতে বিক্রি নিয়ে চিন্তিত তারা। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েকদিন অনলাইন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মানুষ মধ্যম সারির গরু কিনছেন। এ বছর বেশি দামের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। ফলে উন্নত জাতের দামি গরু নিয়ে বিপাকে পড়তে পারেন তারা।
এদিকে করোনার ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যেই রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে নিয়মিত চলছে বেচা-বিক্রি। প্রতি বছর এই হাটে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এ বছর এখনো জমে উঠেনি। তবে হাটে প্রতি মুহূর্তেই ঢুকছে কোরবানি পশু। যে হারে গরু আসছে, সে তুলনায় বিক্রি নেই।
গত শুক্রবার গাবতলী হাটে ৯টি গরু উঠিয়েছেন জামালপুরের ব্যবসায়ী হারুন। পাঁচ দিনে গরু বিক্রি করেছেন ১টি। তিনি জানান, লকডাউনের মধ্যেই হাটে গরু তুলেছি। ঢাকায় ৯টি গরু আনতে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা গরুর পেছনে খরচ হয়। ক্রেতার উপস্থিতি তেমন একটা নেই। যেসব ক্রেতা আসছেন তাদের সঙ্গে দর-দাম মিলে না। ফলে গরু হাটের এখনো অন্য হাটগুলোতে গরু বিক্রি শুরু হয়নি। শুরু হলে এই হাটের ক্রেতার সংখ্যা কমে আসবে। আর অল্প কয়েকদিন সময় আছে। এই সময়ে গরু বিক্রি করতে না পারলে লোকসান হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ভাটারার সাঈদনগর পশুর হাটে দেখা যায়, সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক- কাভার্ডভ্যান। ভেতরে বাঁধা আছে গরু। বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাটের ভেতর। সেখানে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করে তার ভেতরে রাখা হয়েছে এসব গবাদিপশু। হাটে ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা খোশগল্পে মেতে উঠছেন। কেউ কেউ গরুর গোসল ও খাওয়াতে ব্যস্ত। কেউবা আবার নিজেদের খাবার প্রস্তুত করছেন।
আক্কাস আলী নামের একজন ব্যাপারী জানান, শনিবার থেকে শুরু হবে হাট। তবে অনেক ক্রেতা তার আগে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। দরদাম জিজ্ঞেস করছেন। দাম শুনেই চলে যান। ৭০ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকার মধ্যে গরু খুঁজছেন। এ ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ট্রাকভর্তি গরু আসছে। অথচ ক্রেতা নেই।
রাজধানীর আফতাব নগরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ে বসেছে কোরবানি পশুর হাট। এরই মধ্যে হাটের প্রায় অর্ধেক অংশ কোরবানি পশুতে পূর্ণ হয়েছে। হাট শুরুর আগেই চলছে বেচাবিক্রি। আগামী শনিবারের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হবে বৃহত্তম এই গরুর হাট।
আক্তার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে ১৭টি গরু আফতার নগরের হাটে উঠিয়েছেন। গত বছরও এই হাটে ১৩টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে সে সময় ক্রেতা সমাগম ছিল। ব্যবসাও ভালো হয়েছে। এ বছর অনেক দেরিতে গরুর হাট শুরু হচ্ছে। হাটে সাধারণত ১/২ দিন আগে গরু আসে। এ বছর লকডাউন থাকায় আগেই পশু বাজারে উঠছে। আরও উঠবে। এতে বিক্রি কেমন হবে সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছি। মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে ঢাকায় ভালো দামে বিক্রি করতে আনছি। বিক্রি করতে না পারলে পথে বসে যাবো। শুনেছি অনলাইনে গরু বিক্রি বেশি হচ্ছে। একারণে হাটে এর প্রভাব পড়তে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পশুর হাটগুলো মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মো. মফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আগামী ১৭ই জুলাই থেকে হাট শুরু হবে। তবে করোনা মহামারির কারণে অনেক আগেই হাটে গবাদিপশু উঠানো হয়েছে। প্রতিদিনই আসছে গরু, ছাগলসহ কোরবানি পশু। তবে হাট শুরুর আগে দু’এক জায়গায় কয়েকটি গরু বিক্রির কথা শুনেছি। বিষয়টি মেয়রকে জানানো হবে। তবে গত বছরের মতো এবারো হাটে গরুর সংখ্যা বাড়বে।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দুটি স্থায়ীসহ ২৫টি হাট বসাতে চাইলেও করোনা সংক্রমণের কারণে হাটের সংখ্যা কমিয়ে ২০টিতে আনা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়া আরও ৮টি অস্থায়ী হাট বসিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও ১০টি অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে। আগামী ১৭ই জুলাই থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এসব হাটে কোরবানি পশু বেচাবিক্রি হবে।