ঈদুল আজহার বাকি এখনো ৬ দিন। এদিকে দেশজুড়ে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। সংক্রমণের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও পশুর হাট বসাচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ১৭ই এপ্রিল থেকে রাজধানীর ১৯টি পশুর হাটে শুরু হবে বেচা-বিক্রি। এরইমধ্যে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে ইজারাদারদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার, রং বে-রংয়ের গেট, মাইকিংসহ বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চালু হয়েছে ডিজিটাল পশুর হাট।
তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারণ করায় পশুর হাটে ভিড় জমাতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা। অনেকে আগে থেকেই অনলাইনে পশু কিনে রাখছেন। কেউ কেউ সরাসরি বিভিন্ন খামার ঘুরে কোরবানির পশু পছন্দ করে কিনছেন। কেউবা বায়না করে রাখছেন।
এ বছর কোরবানির জন্য দেশি-বিদেশি ২১০০ পশু প্রস্তুত করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো। প্রতিষ্ঠানটিতে এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে ৬৫ শতাংশ কোরবানির পশু। যার অধিকাংশই খামার থেকে সরাসরি ক্রয় করেছেন ক্রেতারা। অনলাইনেও বেড়েছে বিক্রি। প্রতিদিনই ভিড় করছেন নতুন নতুন ক্রেতা। হাঁকাচ্ছেন দর-দাম। অনেকেই অনলাইনের ওপর নির্ভর হতে পারছেন না। তাই সরাসরি খামারে উপস্থিত হয়ে গরু, ছাগল কিনছেন।
ধানমণ্ডি থেকে মোহাম্মদপুরে গরু কিনতে আসা আকতার হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংক্রমণ আরও বাড়তে থাকলে কোরবানি পশুর হাটে গিয়ে গরু কেনা অসম্ভব হয়ে যাবে। এখন অফিস বন্ধ। হাতে ব্যাপক সময়, তাই কয়েকটি গরুর খামার ঘুরে দেখছি। পছন্দও করেছি। এখন দর-দাম করে যেখানে সুবিধামতো পাবো সেখানেই কিনবো। পশুর হাটে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে গরু কিনতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সবকিছু বিবেচনা করে খামার থেকেই কিনলে ভালো হয়।
সাদিক এগ্রোর মার্কেটিং ইনচার্জ মাইদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এখনো হাট শুরু হয়নি। ক্রেতারা খামারে ভিড় করছেন। খামার থেকে সরাসরি কিনতে পছন্দ করেন। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে তারা ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু দেখতে পারেন। আমাদের বেশির ভাগ গরু এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে অনলাইনে অর্ডার করছেন। খামারে দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের সুবিধা অনুযায়ী আমরা গরু, ছাগল ও মহিষ পৌঁছে দিচ্ছি। অনেকেই ক্রয় করে এখানে রেখে যাচ্ছেন, যাতে ঈদের আগে নিতে পারেন।
গত রোববার দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিল আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন সামারাই ক্যাটেল ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন গরু কিনতে। ক্রেতাদের সঙ্গে দর-দাম করছেন বিক্রেতা। অনেকেই দাম বেশি থাকায়, পছন্দ করেও ফিরে গিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। খামারে সারি সারি বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। কোনো কোনো সারির সব গরু বিক্রি হয়ে গেছে। সাদা কাগজে প্রিন্ট করে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ‘এসব গরু বিক্রি হয়ে গেছে’।
প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৪ শতাধিক গরু-ছাগল রয়েছে খামারে। গত রোববার দুপুর পর্যন্ত ১৫০ টির বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। এবার মানুষ খামারমুখী হয়েছে। গত বছরও সব গরু খামারে বিক্রি হয়েছে। কোরবানির পশুর হাটে নিতে হয়নি। আশা করি এ বছরও সকল গরু, ছাগল ও উট বিক্রি হয়ে যাবে। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
খামারে গরু কিনতে আসা উম্মে হাবিবা নামের একজন ক্রেতা বলেন, কোরবানির জন্য আড়াই লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। বিভিন্ন খামার ঘুরে দর-দাম দেখে এখানে পছন্দ করে গরু নিয়েছি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত খামারেই থাকবে গরু। খামারিরা তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে তাদের গাড়িতে করে গরু বাসায় পৌঁছে দিবে। আমাদের কোনো হয়রানির শিকার হতে হবে না। পশুর হাট বসলেও সেখানে মানুষের ভিড়ভাট্টা থাকে। পছন্দ করা কষ্টকর হয়। সেখানে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসে। কেনার পর ভালোমন্দ কিছু হলে বিক্রেতাকে পাওয়া যায় না। পশুর হাটে দালালের অভাব নেই। তারাই গরুর দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে কমিশন নেয়। এ ছাড়া নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়। গরু বাসায় এনে রাখতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এক্ষেত্রে সরাসরি খামার থেকে গরু নিলে সেসব সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় না। সময় নিয়ে সুবিধামতো গরু কেনা যায়। রাখতেও সমস্যা হয় না।
একই চিত্র রাজধানী ঢাকাসহ চারপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা খামারগুলোতে। কোরবানির সময় যত এগিয়ে আসছে, খামারে ক্রেতাদের উপস্থিতিও বেড়েছে।
বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি খামারেই রাখা হয়েছে বিভিন্ন জাতের গরু। এরমধ্যে দেশি গরুর পাশাপাশি ভুটানি জাত, শাহিয়াল ব্রাহমাসহ নানা জাতের গরু রয়েছে। এসব গবাদি পশুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রেখে যত্ন নেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ৯টি পশুর হাট বসানো হবে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেই বসবে এসব হাট। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করে হাটে আসতে হবে। কেউ যাতে বিধি ভঙ্গ করতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহলে থাকবে।
এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ করপোরেশন এলাকায় ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাটের তিন পর্যায়ে দরপত্রের আহ্বান জানিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা প্রদান করা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে আর কোনো পশুর হাট ইজারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।