দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সংক্রমণ। যা এরই মধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। সর্বশেষ ১২ দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু একশ’র বেশি। বাড়তে বাড়তে তা দুইশ’র ঘরে ঠেকেছে। দৈনিক শনাক্ত বাড়ছে একই গতিতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে শনাক্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি আগামীতে কোথায় গিয়ে ঠেকে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চারদিকে।
১২ দিনে সারা দেশে করোনায় ১৭৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৬ হাজার ৮১ জন। এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে ৭ই জুলাই। এদিন মৃত্যু হয়েছে ২০১ জনের। আর একদিনে আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে গতকাল। আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৬ শ’ ৫১ জন। অর্থাৎ ১২ দিনের মাথায় শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। শনাক্তের হার প্রায় ৩২-এর ঘরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২৭শে জুন ১১৯ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২৫শে জুন ১০৮ জনের মৃত্যু হয়। এর আগ পর্যন্ত দৈনিক প্রাণহানি একশো’র নিচে ছিল। ২৮শে জুন করোনায় মৃত্যু হয় ১০৪ জনের, রোগী শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৩ শ’ ৬৪ জন। ২৯শে জুন মৃত্যু হয় ১১২ জনের, রোগী শনাক্ত হয় ৭ হাজার ৬ শ’ ৬৬ জন। ৩০শে জুন মৃত্যু হয়েছে ১১৫ জনের, শনাক্ত হন ৮ হাজার ৮২২ জন রোগী। ১লা জুলাই মৃত্যু হয় ১৪৩ জনের, শনাক্ত হন ৮ হাজার ৩০১ জন। ২রা জুলাই মৃত্যু হয়েছে ১৩২ জনের, শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৪৮৩ জনের। ৩রা জুলাই ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়, শনাক্ত হয় ৬ হাজার ২১৪ জন রোগী। ৪ঠা জুলাই করোনায় মৃত্যু হয় ১৫৩ জনের, শনাক্ত হন ৮ হাজার ৬৬১ জন। ৫ই জুলাই মৃত্যু হয়েছে ১৬৪ জনের, শনাক্ত হন ৯ হাজার ৯৬৪ জন। ৬ই জুলাই মৃত্যু হয় ১৬৩ জনের, শনাক্ত হন ১১ হাজার ৫২৫ জন। ৭ই জুলাই করোনায় মৃত্যু হয় ২০১ জনের, শনাক্ত হন ১১ হাজার ১৬২ জন। সর্বশেষ গতকাল ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়।
গত বছরের ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ই মার্চ প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। তখন আবার কমেছে। প্রথমদিকে রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। প্রথম কয়েক মাস উদ্বেগ থাকলেও ভাইরাসটি গ্রাম পর্যায়ে তেমন একটা ছড়ায়নি। তবে ২০২০ সালের মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হট স্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো। এখন পুরো দেশই করোনার হট স্পট। দৈনিক প্রাণহানির অর্ধেকের বেশি হচ্ছে জেলা- উপজেলায়।
শনাক্তে নতুন রেকর্ড: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আগের রেকর্ড ভেঙে একদিনে করোনায় ১১ হাজার ৬৫১ জন শনাক্ত হয়েছেন। করোনা মহামারিকালে এটাই সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৬ই জুলাই দেশে ১১ হাজার ৫২৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ১৯৯ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৭৯২ জনে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮৪৪ জন এবং এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন সুস্থ হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৬০৫টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ২৪টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৩৬ হাজার ৮৫০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৯৯ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৩ জন আর নারী ৬৬ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেলেন ১১ হাজার ১৩৫ জন এবং নারী মারা গেলেন ৪ হাজার ৬৫৭ জন। তাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১০৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ২ জন। মারা যাওয়া ১৯৯ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৭ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৫ জন, খুলনা বিভাগের ৫৫ জন, বরিশাল বিভাগের ৩ জন, সিলেট বিভাগের ৫ জন, রংপুর বিভাগের ৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের রয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৪৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪২ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ১২ জন।
এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট শনাক্তের ৪২ দশমিক ৪৭ শতাংশ রোগী রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩৯ জন। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৩৬ জন। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৮ জন। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৭৪৪ জন। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩২ জন। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৪১৪ জন। শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮৯ জন। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ।