করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ায় প্রথম চার দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ১০৯ জনকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ৯২৭ জনকে। এছাড়া সড়ক পরিবহন আইনে ১ হাজার ৮৪৪টি গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হয়েছে ৪২ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকা। গতকাল সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিনে ডিএমপির আওতাভুক্ত ৮টি বিভাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬১৮ জনকে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৬১ জনকে ৫৪ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সড়ক পরিবহন আইনে ৪৯৬টি গাড়ি আটকে মামলা দিয়েছে। জরিমানা করেছে ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা। লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৫০ জনকে।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ টাকা জরিমানা করা হয়। সড়ক পরিবহন আইনে ২৭৪টি গাড়িকে মামলা দিয়ে ট্রাফিক বিভাগ জরিমানা করেছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা। শুক্রবার লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীজুড়ে ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওইদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছিল ২০৮ জনকে। ট্রাফিক বিভাগ সড়ক পরিবহন আইনে ২১৯টি গাড়িকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। লকডাউনের তৃতীয় দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ৬২১ জন। জরিমানা করা হয় ৩৪৬ জনকে। ট্রাফিক বিভাগ সড়ক পরিবহন আইনে ৮৫৫টি গাড়ি আটকে জরিমানা করেছে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা।
ডিএমপি জানিয়েছে, লকডাউন বাস্তবায়নে ডিএমপির রমনা, লালবাগ, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগ মাঠে কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে টহল, অভিযান, চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে সরকার প্রদত্ত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। লকডাউনে সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হলে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা ও জরিমানা করছে ট্রাফিক ডিভিশন।
ডিএমপি মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিনেও প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সমগ্র ঢাকা শহরে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ডিএমপি। বর্ষা মৌসুম, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাস্তাঘাট যাদের কর্মস্থল তাদের কাছে সেই স্বাভাবিক পরিবেশও বৈরী হয়ে ধরা দেয়। গতকাল প্রবল বৃষ্টিতে মাথায় ছাতা নিয়ে, কেউ বা রেইনকোট পরে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য হালকা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পেশাদারিত্বের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। পুরো শহরে অসংখ্য চেকপোস্ট স্থাপন, জোরালো টহল, অলিগলিতে নজরদারি, ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ তৎপরতা ছিল দেখার মতো। ডিএমপি সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। কেননা, করোনাভাইরাসজনিত রোগ মোকাবিলা করার জন্যই এই বিধিনিষেধ।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত রমনা ট্রাফিক বিভাগ ৩৬টি গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, লালবাগ বিভাগে ৪৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাসহ জরিমানা করেছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, মতিঝিলে ২১টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৫৩ হাজার টাকা, ওয়ারি বিভাগে ২১টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৪৪ হাজার টাকা, তেজগাঁও বিভাগে ২৯টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা, মিরপুর বিভাগে ৯১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা, গুলশান বিভাগে ২৫টি গাড়ির মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং উত্তরা বিভাগে ৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। এর বাইরে
এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে করা হচ্ছে জরিমানা। যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হলে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ মামলা-জরিমানা করছে। এতো কিছুর পরও মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও অলিগলির রাস্তায় দেদারছে আড্ডা দিচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলো আগের মতো খোলা। সরকার নির্ধারিত সময়ের পরও রাস্তায় ভ্যান দিয়ে সবজি-ফলমূল বিক্রি করছেন হকাররা। থানা পুলিশের টহল গাড়ি হঠাৎ এলে মানুষ কিছু সময়ের জন্য সরে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা আড্ডা জমায়। যানবাহন চলাচল কম থাকায় যুবক-তরুণরা মাঝ রাস্তায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ভিড় জমাচ্ছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) লকডাউনের চতুর্থ দিনেও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে ছিল। চতুর্থ দিনে র্যাব সারা দেশে ১৮৭টি টহল ও ২১১টি চেকপোস্ট বসায়। দেশব্যাপী ৫৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪৩৮ জনকে ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া বিনা প্রয়োজনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও বিনামূল্য মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজারের বেশি মাস্ক বিতরণ ও ৩০ জন অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। এ ছাড়া লডাউনের প্রথমদিন র্যাব ১৮২ জনকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ টাকা ও দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ২১৩ জনকে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৪০ টাকা ও তৃতীয় দিন দেশব্যাপী র্যাব ও তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৭৭ জনকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৫ টাকা জরিমানা করে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে অন্যান্য বাহিনীর মতো কাজ করে যাচ্ছে র্যাব। প্রতিদিনই সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি র্যাব টহল দিচ্ছে এবং চেকপোস্ট বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রথম তিনদিনেই আমরা বিধিনিষেধ ভঙ্গের জন্য ৭শ’ জনকে আইনের আওতায় এনেছি। ৬ লাখ টাকার মতো জরিমানা করা হয়েছে। র্যাব পাড়া-মহল্লায় অভিযান চালিয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলার কাজ করছে। মাইকিং ও মাস্ক বিতরণ করেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে অযথা বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন ব্যক্তিদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি।