গাজীপুরে সাংবাদিক ফিারোজ লাভলু গ্রেফতার, রিমান্ড ও সাংবাদিকদের নীরবতা!

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

গাজীপুর: ২০০০ সালে গাজীপুর শহরের রথখোলায় সাংবাদিক ফিরোজ লাভলুর সাথে আমার পরিচয়। সেই থেকে চেনাজানা ও জানাশুনা শুরু। আজ পর্যন্ত তার সাথে শত্রুতা বা বন্ধুত্ব একটিও গড়ে উঠেনি। উনি উনার মত আমি আমার মত কাজ করছি। বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পর্ক না থাকলেও একটি সংগঠনে এক সময় এক সাথে কাজও করেছি আমরা। দেখা না হলেও অফিসিয়াল প্রতিবেশী আমরা।

সাংবাদিক ফিরোজ লাভলুর বাড়ি রংপুরে। অনেকবছর ধরে তিনি গাজীপুরে বসবাস করছেন। তার বাবা মাও গাজীপুরে ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবেই লাভলু গাজীপুরে পরিচিতি। সাংবাদিক ফিরোজ লাভলুর হাত ধরেই অনেক ডাকসাইটের কথিত সাংবাদিক নেতারা আজ মুই কি হুনুরে। সাংবাদিক ফিরোজ লাভলুকে সাংবাদিকেরা তাদের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে যেমন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ঠিক রাজনৈতিক লোকেরাও স্বদলীয় বা বিপরীত রাজনৈতিক পক্ষকে ঘায়েল করতে তাকে এমনিভাবে ব্যবহার করেছেন। অনেক নতুন মানুষ লাভলুর সাথে ঘুরে সাংবাদিক হয়েছেন ও অনেক নেতা ভালো পদ পেয়ে টাকাও কামিয়েছেন। অনেকে লাভলুর সাথে ঘুরে ভালো ব্যবসায়ীও হয়েছেন। অনেকে ফিরোজ লাভলুকে ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতিও করেছেন এমনকি সাংবাদিকদেরও ক্ষতি হয়েছে এমন কাজও লাভলুকে দিয়ে করানো হয়েছে। ফিরোজ লাভলু নিজে বেশ কয়েকটি সংগঠনও করেছেন। বিভিন্ন দিবসে অনেক লোক এক রঙা পোষাক পড়ে লাভলুর নেতেৃত্বে র‌্যালী করেন। সরকারী-বেসরকারী অনুষ্ঠানে সামনের কাতারে লাভলু থাকেন। লাভলুর সাথে বড় বড় সাংবাদিক সাহেবরা গলায় গলায় ভাব করে কাজ করেছেন। কিন্তু আজকে তাকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছেন কেন!

গেলো বুধবার রাতে সাংবাদিক ফিরোজ লাভলু গ্রেফতার হন । পরদিন বৃহসপতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয় রিমান্ড চেয়ে। আদালত জেল গেটে একদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। জানা গেছে, একটি জমির পাওয়ার মূলে মালিকানা দাবী করে লাভলু আদালত থেকে ১৪৫ ধারা জারী করিয়েছেন। এতে নির্মান কাজ বন্ধ না হওয়ায় তিনি পুলিশকে ডেকে নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধা দিয়েছেন। এই ঘটনায় প্রতিপক্ষের মামলায় পুলিশ লাভলুকে গ্রেফতার করে রিমান্ড পায়।

ফিরোজ লাভলুর এই ঘটনা সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা নয়, এটি সাংবাদিকের ব্যক্তিগত বিষয়। এই অজুহাতেই গাজীপুরের সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করছেন না, বা ন্যায় বিচার চায় নি বলে বলাবলি হচ্ছে। কিন্তু সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাঁধা আসলে এবং সাংবাদিক ফিরোজ লাভলু আক্রান্ত বা গ্রেফতার হলে যিনি ক্ষতিগ্রস্থ হতেন আজ ব্যক্তিগত কারণে তিনিই কারাগারে আছেন। সাংবাদিক ফিরোজ লাভলু আর আজকে কারাগারে থাকা ফিরোজ লাভলু একই ব্যক্তি। সাংবাদিক, সাংবাদিকতা করে বলে তার ব্যক্তিগত কিছুই থাকবে না সেটা নয়। কথা হল, সাংবাদিক ফিরোজ লাভলু যেন একজন নাগরিক ফিরোজ লাভলু হিসেবে ন্যায় বিচার পায় সেই দাবী থাকবেই কিন্তু গাজীপুরের সাংবাদিক সমাজ সেই দাবীটুকুও করেননি। কারণ নিজের আঁখের গোছানোর সময় ডিস্টার্ব যেন না আসে সেই দিকে আমরা সজাগ ও সচেতন। তবে এই ক্ষেত্রে একটিবার মনেও করিনা, আমরা ফিরোজ লাভলুকে দিয়ে কি কি কাজ করিয়েছি আর কি কি উপকার পেয়েছি। অনেক সাংবাদিক লাভলুর সহযোগিতায় মামলা করিয়েছেন আবার অনেকে মামলায় পড়ে তাকে ব্যবহারও করেছেন। অনেক সাংবাদিক গ্রেফতার হওয়ার পর থানায় ও কারাগারে ফিরোজ লাভলু খাবার নিয়ে গেছেন, এবং তা তারা খেয়েছেনও মজা করে। আজ সেই মজার কথা কারো মনে নেই। আমি ফিরোজ লাভলুকে দিয়ে কোন কাজ করাইনি বা উপকৃত হওয়ার সুযোগও হয়নি। কিন্তু প্রায় দুই যুগের সাংবাদিকতায় যা দেখেছি, তা আমার জন্য ইতিহাসই। এই ইতিহাস থেকেই আজকের এই কথা বলা।

মানুষ নিজে যা সৃষ্টি করেন, সেই সৃষ্টির সুফল বা কুফল তাকেই ভোগ করতে হয়। গাজীপুরের সাংবাদিক সমাজ যদি ফিরোজ লাভলুকে সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিতেন তবে আজকের ভূমিকা ঠিক ছিল। কিন্তু ফিরোজ লাভলুকে স্বাদরে বরণ করে সহকর্মী থেকে গুরুও বানিয়ে আজ তাকে না চিনার বান করা রীতিমত প্রতারণার সামিল। স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দুই হাত বাড়িয়ে ব্যবহার করার পর ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার জিনিসটা অনেকটাই টিস্যুর মত, মানুষের মত নয়। এই ধরণের জঘন্য মানুষিকতার লোক যেন সাংবাদিকতায় জড়িয়ে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, বিপদে পড়লে চিনিনা, আর আপদ বিদায়ে পায়ে ধরি এমন মানুষিকতার লোক আর যাই হউক সাবাদিকতায় থাকা ঠিক না।

পরিশেষে দাবী জানাই, একজন নাগরিক হিসেবে ফিরোজ লাভলু যেন ন্যায় বিচার পায়। তিনি অপরাধ করে থাকলে শাস্তি ভোগ করবেন কিন্তু অপরাধ না করে থাকলে ন্যায় বিচার পাবেন এই আশাবাদ রইল।

রিপন আনসারী
সভাপতি
গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *