ইসরাইলি পুলিশ গণহারে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের গ্রেফতার করছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ১,৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো অনেককে গ্রেফতার করার অভিযান চলছে। বিশেষ করে যারা পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ উচ্ছেদ অভিযান ও গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ করেছিল, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরাইলি পুলিশ একে ‘অপারেশন ল অ্যান্ড অর্ডার হিসেবে অভিহিত করেছে। গাজায় ১১ দিনের হামলার পর যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে উভয় পক্ষ। এরপর পরই গ্রেফতার শুরু করেছে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় ২৪৮ জন নিহত হয়েছে।
রোববার রাতে এক বিবৃতিতে ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ৯ মে থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা গত দুই সপ্তাহে ইসরাইলের বিভিন্ন শহর ও নগরে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের গ্রেফতার করা অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে।
ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সব ইউনিটের সদস্যদের এই অভিযানে নিয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ ফিলিস্তিনি।
গাজায় ইসরাইলি হামলার সময় ইসরাইলে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। ওইসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইসরাইলি পুলিশ তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কিছু বলেনি।
লিগ্যাল সেন্টার ফর আরব মাইনরিটি রাইটস ইন ইসরাইলের পরিচালক হাসান জাবারিন বলেছেন, এটা আসলে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী, রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’।
তিনি সোমবার আল জাজিরাকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, গণগ্রেফতার অভিযান আসরে ইসরাইলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিকীকরণ করা যুদ্ধ। তিনি সকল ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন, দল এবং হাই ফলো-আপ কমিটি ফর আরব সিটিজেন্স অব ইসরাইলের কাছ থেকে ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়া’ প্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের উদ্দেশ্য হলো ভীতি প্রদর্শন করা ও ইসরাইলের ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করা।
শেখ জাররাহ থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে চলতি মাসের প্রথম দিকে হাইফা, ইয়াফা, লিড ও নাজারেথে বিক্ষোভ হয়। এসময় অনেক ইহুদি বসতি স্থাপনকারী পুলিশের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়। তারা এমনকি আরবদের মৃত্যু কামনা করে স্লোগানও দেয়।
এখন পর্যন্ত ২৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদেধ পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা, রাস্তায় নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করা, বিক্ষোভ করা, পাথর নিক্ষেপ করা, অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ভুল হিসাব
এদিকে ফিলিস্তিনি-সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচনী জোট জয়েন্ট লিস্টের হয়ে ইসরাইলি পার্লামেন্টের সদস্য আহমদ তিবি বলেছেন, জেরুসালেম ও গাজায় ইসরাইলি হামলার সমর্থনে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা বিক্ষোভ করবে, তা আশা করেনি ইসরাইল।
ফিলিস্তিনিরা আগেও বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তবুও এবার তারা তা আশা করেনি। এটা ছিল ইসরাইলি পুলিশের বড় ধরনের ভুল হিসাব।
তিবি বলেন, প্রতিবাদের সর্বশেষ দফার সফ ইসরাইলি পুলিশ ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে’ ফেলে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বিনিময়ে ইসরাইলি পুলিশ নিয়ন্ত্রণ জারি করতে চায়।
হাইফাভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট মাজদ কাইল তার সাথে একমত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আমাাদের তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বন্ধ করতে ভীতি প্রদর্শনে এটা একটা দুঃখজনক প্রয়াস।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ইসরাইলি পুলিশ ফিলিস্তিনিদের ভীত করতে ও সন্ত্রস্ত্র করতে তাদের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে তারা গণগ্রেফতারে এই অভিযান শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘন্টায় আরো ৫০০ ফিলিস্তিনি বাড়ি ঘেরাও করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বরেন, তারা আমাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে চায়, শিক্ষা দিতে চায়। তারা ফিলিস্তিনি ঐক্য বাধাগ্রস্ত করতেও চায়।
এদিকে ইসরাইলের ফিলিস্তিনিরা গণগ্রেফতারকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে এই অভিযানের কথা প্রচার করছে।
সূত্র : আল জাজিরা