তিন জেলায় মঙ্গলবার বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নেত্রকোনায় আটজন, ফরিদপুরে চারজন ও মানিকগঞ্জে দুইজন। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছেন ক’জন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন :
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, জেলার চার উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যু ও ৯ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে খালিয়াজুরিতে তিনজন, কেন্দুয়ায় দুজন, মদনে দুজন ও পূর্বধলায় একজন মারা যান। এছাড়া খালিয়াজুরিতে পাঁচজন ও মদন উপজেলায় চারজন আহত হয়েছেন।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের খেলু ফকিরের ছেলে কৃষক ওয়াসেক মিয়া (৩২), একই গ্রামের আমির মিয়ার ছেলে কৃষক বিপুল মিয়া (২৮) ও বাতুয়াইল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে মনিরুল হক (২৮) বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তারা সকলেই বরবরিয়া হাওরে ধার কাটার কাজ করছিলেন। এ সময় পাঁচজন আহত হন। আহতদের খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
কেন্দুয়া থানার ওসি কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটী গ্রামের মো: বায়েজিদ মিয়া (৪২) ও কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুণ্ডলী গ্রামের মো: ফজলুর রহমান (৫৫) মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে বৃষ্টিপাত চলাকালে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান।
মদন থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস আলম বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টিপাত চলাকালে মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের পেছনে পতিত জমিতে কিশোররা ফুটবল খেলতে গেলে বজ্রপাতে ফতেপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) ও একই গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা আতাবুর রহমান (২১) মারা যান। এ সময় পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রবিন (১৫), রুমান (১৮) ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা (৪৫) ও চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার আহত হন। আহতদেরকে মদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পূর্বধলা থানার ওসি মো: শিবিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বৃষ্টিপাত চলাকালে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পালগী গ্রামে বজ্রপাতে ইছাক ফকিরের ছেলে স্কুলছাত্র জুনায়েদ (১১) ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো: আবদুর রহমান জানান, বজ্রপাতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে নগদ ১০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, জেলায় বজ্রপাতে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ও সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, ৫ নং ওয়ার্ডের মোল্লা ডাঙ্গী মহল্লায়, সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও মধুখালী উপজেলার চাদপুরে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় বজ্রপাতে নিহত হন আনোয়ারা বেগম (৪৫) নামে এক নারী। ঘটনার সময় ওই নারী স্বামী ও ছেলের সাথে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি মোল্লা ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী।
এরপর বিকেল চারটার দিকে বজ্রপাতে মারা যান কৃষক কবির মোল্লা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে। ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বজ্রপাতের শিকার হন।
একই সময়ে বজ্রপাতে সদর উপজেলার নথ চ্যানেল ইউনিয়নে মারা যান দুলাল খান (৫৮) নামের এক কৃষক।
এছাড়া মধুখালীতে বৃষ্টির মধ্যে পাটখেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কবির শেখ (৪১) নামক এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের নবিন শেখের ছেলে।
কামালদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, বাড়ির পাশে মাঠে বৃষ্টির মধ্যে নিজস্ব পাটের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে বজ্রপাতে দুইজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এলাকার পৌলি ও গিলন্ড গ্রামে আলাদা বজ্রপাতের ঘটনায় তারা মারা যান।
পৌলি এলাকায় নিহত ব্যক্তির নাম আজমত আলী(৫০)। তার বাড়ি জেলার ঘিওর উজেলায় এবং গিলন্ড গ্রামে নিহত ব্যক্তির নাম আসিফ (১৬)।
পৌরসভার স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: কবীর হোসেন বলেন, নিহত আজমত আলী পৌলি এলাকার কৃষক আব্দুল হকের বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছিলেন। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ধানখেত থেকে ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গিলন্ড গ্রামের আসিফ ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছেন।