ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।
এদিকে, গত এক সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান হামলায় ১৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫২ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও দুঃখ প্রকাশ করেননি জো বাইডেন। উল্টো ফিলিস্তিন থেকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের হামলাকে তাদের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে তাদের এই অধিকারের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরাইলের টানা সংঘাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান নিয়ে নিজ দলের মধ্যেই তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইসরাইলের প্রতি এমন অবস্থানের কারণে তার দল ডেমোক্র্যাট পার্টির ভেতরে ক্ষোভের ও বিভক্তির তৈরি করেছে। বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা ইসরাইলের ওপর চাপ তৈরিতে কাজ করতে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটরা সামাজিক ও জাতিগত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছে। উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা চান অভ্যন্তরীণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পররাষ্ট্রনীতিতেও ন্যায়বিচারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে বাইডেন প্রশাসন।
দলের উদারপন্থীরা মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করে ইসরাইলের পক্ষে হোয়াইট হাউসের অবস্থান নেওয়ার সমালোচনা করছেন। পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোতে উচ্ছেদ নিয়ে ইসরাইলের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান না নেওয়ার জন্যও তারা বাইডেনের সমালোচনা করছেন।
ইসরাইলের নিজেকে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে- বাইডেন একথা বলার পর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের উদারপন্থীরা ব্যাপক সমালোচনা করেন। নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-করটেজ বলেন, তাহলে কি ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই? তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, যদি বাইডেন প্রশাসন একটি মিত্রের বিপক্ষে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে না পারে তবে কে পারবে? তাহলে কীভাবে দাবি করবেন যে আপনারা মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন?
মিশিগানের কংগ্রেসম্যান রশিদা তালিব বলেন, ইসরাইল গণমাধ্যমকে টার্গেট করছে কিন্তু বিশ্ব তাদের যুদ্ধাপরাধ দেখতে পারছে না। ডেমোক্র্যাট নেতা সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো। তারা নেতানিয়াহু সরকারের সমর্থনকারী হতে পারে না।
মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেন, ইসরাইলের পরিকল্পিত ফিলিস্তিন উচ্ছেদ অভিযানে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে। তাছাড়া, সর্বোপরি বাইডেন প্রশাসনের মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি এরিক সলওয়েল বলেন, আমাদেরকে এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে এখন একজন দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্ট আছেন, আমি মনে করি তিনি ইসরায়েলের নেতাকে যা করা প্রয়োজন সেটি করতে চাপ দিতে পারবেন।
একই সুর শোনা গেছে বার্নি স্যান্ডারসের বক্তব্যেও। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে বার্নি বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট আসায় যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বে ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।