নিম্নআয়ের মানুষের নেই ঈদের খুশি

Slider জাতীয়


ঈদ আসে খুশির বার্তা নিয়ে। কিন্তু নিম্নআয়ের মানুষের নেই ঈদের খুশি। যেখানে করোনার মধ্যে পেট বাঁচানো দায়। সেখানে ঈদের নতুন জামা-কাপড় কেনা তাদের কাছে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। সালমা বাসা বাড়িতে কাজ করেন। করোনা আগে চার বাড়িতে কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করতেন। গত বছর করোনার শুরুতে বাড়িতে চলে যান। এ বছর মার্চ মাসে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন।

কিন্তু কাজ আর ফিরে পাননি। বহু কষ্টে দুটি বাড়িতে কাজ জোগাড় করে কোনোরকমে কষ্টে জীবন চলছে তার। তিনি বলেন, ‘পুরা রমজানে কত কষ্ট কইরা চাইরটা ভাত খাইয়া রোজা রাখছি। একটু খেজুর পর্যন্ত কিনতে পারিনি। আমাগো আর ঈদের আনন্দ। খুব কষ্ট কইরা সংসার চালাইতেছি। পোলাপান এই অভাবে সংসারে পেট ভইরা খাইতে পারলেই খুশি। ঈদে নতুন কাপড়ের কথা ওরা মুখেও আনে না, জানে আমি দিতে পারবো না।’ কাওরান বাজারে মালামাল আনানেয়ার কাজ করেন মুনির। সারাদিন টুকরি ভরা বাজার গাড়িতে তুলে দেন তিনি। কিন্তু দিন শেষে নিজের টাকার হিসাব করে সংসারে জন্য চাল ডাল নিতেও কষ্ট হয় তার। মুনির বলেন, ‘সারা দিন মানুষের বাজার মাথায় নিয়ে ঘুরি। কিন্তু নিজের বাজারটাই ঠিকমতো করতে পারি না। সারা দিনে একশ’ টাকা কামাই করতেও কষ্ট হয়। বাজার গাড়িতে উঠায় দিলে বেশিরভাগ মানুষ ১০ টাকা দেয়। মাঝেমধ্যে কেউ একটু বেশি দেয়। আগে ঈদ আইলে মানুষ টুকরি ভইরা বাজার কইরা নিয়া যাইত। আর আমাদের বকশিশও দিতো। তখন ঈদে বউ, পোলাপানদের নতুন জামা-কাপড় দিছি। গরুর মাংস দিয়া ভাত খাইছি, সেমাই খাইছি। গত বছর করোনার পর থেকে মানুষ এখন বকশিশও দেয় না। গতবার ঈদেও বউ-পোলাপানগো কাপড় দিতে পারিনি। এবারও পারুম না। আমাগো আবার ঈদ কি? করোনা গরিবদের সব খুশি কাইড়া নিছে। এই ঈদে গরুর মাংস দিয়া ভাত খামু সেইটাও চিন্তা করতে পারি না।’ রিকশাচালক সেলিম বলেন, ‘আমার আর কিসের ঈদ। বউ-পোলাপান দেশে। বাড়িতে যাইতে পারছি না। রিকশা চালায় যে টাকা কামাই করি তা দিয়া তো পেট চলে না। গাড়ি ভাড়া পামু কই? এখন আর আগের মতো কামাই নেই। করোনা আমাগো পথে বসায় দিছে।’ মহল্লায় ঘুরে ঘুরে কাগজ কেনেন মজিদ। কিন্তু এখন আর কাগজের ব্যবসাও ভালো নেই। মজিদ বলেন, ‘করোনার পর থেইকা কাগজ বেচাকেনা খুব খারাপ। মানুষ এখন আর আগের মতো বাসাবাড়িতে সংবাদপত্র রাখে না। আবার স্কুল বন্ধ থাকায় খাতার খরচও এখন কম। আবার করোনার ভয়ে বাসাবাড়িতে উঠতেও দেয় না মানুষজন। কোনোরকমে কষ্ট কইরা সংসার চলছে। কাজেই ঈদের কোনো খুশি নেই আমাদের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *