অরাজনৈতিক মৃত্যুও চাই কিন্তু

Slider টপ নিউজ সম্পাদকীয়


ঢাকা: মানুষের জন্মমৃত্যু অবধারিত। জন্মিলে মরতে হবেই। তবে জন্মটা কিছু সময় আগে জানা যায় কিন্তু মৃত্যু জানিয়ে আসে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কে কোন ধর্মের কোন গোত্রের ধনী না বড় লোক, মোটা না চিকন এবং ক্ষমতাবান না ক্ষমতাহীন এসব বিবেচনা মৃত্যুতে থাকে না। যার আসার দরকার সে আসবেই, আর যার যখন যাওয়া দরকার সে যাবেই। এই নিয়ন্ত্রন কারো হাতেই নেই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া। মৃত্যু স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক হতে পারে। তবে প্রতিটি মৃত্যুই কাংখিত নয়। কারণ মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে। একজন মানুষ যখন মারা যায়, তখন কেউ না কেউ চায় সে আরো জীবিত থাকুক। সুতরাং প্রতিটি মৃত্যুই অনকাংখিত এটা সঠিক।

আমাদের বাংলাদেশে অধিকাংশ মৃত্যু নিয়ে জল্পনা কল্পনা তৈরী হয়। পারিবারিক ও সামাজিক সমালোচনা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় সমালোচনাও থাকে। অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ বিচারের সম্মুখিন হয়ে যায়। এ রকম হওয়ার জন্য দায়ী অনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা ও রাজনীতি। কিছু কিছু মৃত্যু খুন হয়ে যায়। খুনের কারণ সামাজিক আনাচার বা রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি। আবার অবহেলাজনিত মৃত্যুর পিছনে দায়ী জবাবদিহিতার অপ্রতুলতা। অতি রাজনীতির কারণে আমাদের সব কিছই কেমন জানি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ‍মৃত্যুগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আমাদের যথাযথ দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায় অনাকাংখিত মৃত্যুগুলো কখনো নৃশংসতাকেও হারা মানায়। বিশ্বের ইতিহাসে কোন দেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে এমনটি জানা নেই। এই ধরণের ন্যক্কারজনক ও পৈশাচিক ঘটনার বিচার হতে খুন হওয়া রাষ্ট্রপতির মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী হতে হয়, এমন নজীরও বিরল। আবার সিটিং রাষ্ট্রপতিকে নৃশংসভাবে খুনের পর ৪০ বছরেও বিচার হয়নি এমন ইতিহাসও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবেচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাসীন দেশ। এই দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একজন মানুষ খুনের পর বিচার নিশ্চিত করা সত্বেও স্বয়ং রাষ্ট্রপতি রাজপথে হাঁটুঘেরে বসে দুই হাত জোর করে নিহত ব্যক্তির শিশু পুত্রের নিকট ক্ষমা চাওয়া সত্যিই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। খৃুনের বিচার কি ধরণের হওয়া উচিত, নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ছবি তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

আামাদের বিচারিক কার্যক্রম কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যাবে জানিনা। তবে এই টুকু জানা আছে, স্বপরিবারে খুন হওয়া রাষ্ট্রপতির বিচার বন্ধ করতে পারি আমরা। রাষ্ট্রপতি খুনের বিচার ৪০ বছরেও শেষ করতে পারিনি আমরা। লাখ লাখ মানুষ খুন ও ইজ্জ্বত লুন্ঠন ঘটনার আসামীদের বিচার না করে মন্ত্রী বানাতে পারি আমরা। জোর করে ক্ষমতা চালানো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মানুষের রক্তে রঞ্জিত হাতেগুলোকে সাথে নিয়ে আবার সরকার চালাই আমরা। মানুষের রক্তের বিনিময়ে ভোটের আগেই পাশ করি আমরাই। মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে রক্ত ও লাশের ব্যবসা করি আমরাই। রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি করে রক্ত ও লাশ দিয়ে ক্ষমতায় থাকা ও আসার কাজটি আমরাই করছি। এ ছাড়াও ক্ষমতার প্রয়োজনে রাষ্ট্রের কর্মচারী দিয়ে রাষ্ট্রের মালিকদের হত্যা করছি আমরা হতভাগা মানুষেরা। কর্মচারী দিয়ে মালিককে মেরে পিটিয়ে লুকিয়েও ফেলছি আমরা। অসংখ্য রাষ্ট্রীয় মালিকের স্ত্রী বলতে পারছেন না, স্বামী জীবিত না মৃত। সন্তান কাগজে লিখতে পারছে না, বাবা মরহুম না জীবিত। কিন্তু এসবের কোন বিচার করতে পারছি না আমরা সহজে। ফলে দিন দিন অপরাধ বাড়ছে। রাজনীতির সুফল ভোগের আশায় অপরাধগুলোর নিয়ন্ত্রনও যেন আস্তে আস্তে কষ্টকর হচ্ছে আমাদের জন্য।

বাংলাদেশে যে সকল মৃত্যু রাজনৈতিক রঙে রঞ্জিত হয়েছে, তার অধিকাংশই বিচারের আওতায় আসছে কম। কখনো বিচার শুরু আবার কখনো বিচার শেষের খবরও নেই। এসব শুধু মাত্র ক্ষমতার জন্য। মানুষ হয়ে মানুষের রক্ত বা লাশ ব্যবহার শুধুই মানুষের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য। রাজনৈতিক খুন বা মৃত্যু বা অপমৃত্যু যাই বলি না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়ার ছবি থেকে শিক্ষা নেয়া ভালো।

চলমান ঘটনা প্রবাহে বলতে হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। সরকার তার দন্ড স্থগিত করে নতুন ইতিহাস তৈরী করে ঘরে রেখেছেন। এমনভাবে বেগম জিয়া ঘরে আছেন যা কারাগারে থাকার চেয়েও কম নয়। বেগম জিয়া করোনায় আক্রান্ত। তার বাসার সকলেই করোনায় আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য পরিবার বিদেশে নিতে চান। সরকারও আন্তরিক। ভালো খবর। জাতি চায়, প্রতিটি নাগরিকের মত বেগম জিয়াও চিকিৎসা সেবা পাক। মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। যার হায়াত শেষ তিনি চলে যাবেন। কোন ক্ষমতাও তাকে ধরে রাখতে পারবে না। তবে বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী চাহিদা অনুসারে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলে সেটা হবে আরেকটি নতুন ইতিহাস। যা আমাদের অতীত ইতিহাসকে প্রসিদ্ধ করবে। এবং দায়ের পাল্লাও ভারী হবে। জাতি আশা করে, আমাদের রাজনৈতিক বোধের উদয় যেন কোথাও আটকে না যায়, সেই দিকে সজাগ থাকা।

লেখক,
প্রধান সম্পাদক
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *