গাজীপুর;ইতিহাসে বড় লোক হওয়ার কাহিনী নানা ধরণের। আমাদের দেশে বড় লোক হওয়ার কাহিনী অনেকটা ফিল্মিস্টাইলের। আজ যিনি ভাড়াটিয়া কাল তিনি ওই বাড়ির মালিক। কর্মহীন ওই বড় লোক সমাজে আবার বড় চেয়ারে বসে গেছেন। কারণ আগে যিনি জনসভার ভাড়া করা কর্মী ছিলেন তিনি আজ মঞ্চের অতিথি। কোন মার্কেটে যিনি দোকান কর্মচারী ছিলেন তিনি আজ মার্কেটের মালিক। চাাঁদাবাজী করতে গিয়ে ধরা খাওয়া সেই চাাঁদাবাজও কারখানার মালিক এখন। ঘড়ির দোকানের কর্মচারী এখন কোটি কোটি কোটি টাকার মালিক, বড় বড় অট্রালিকার মালিক হয়ে গেছেন। কর্মহীন বেকার ওই লোকগুলোর সম্পদের পাহাড় আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকেও বিষিয়ে তুলেছে। কারণ কোন কাজ না করে যদি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়, তবে সমাজে খারাপ লোকের সংখ্যা বাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই রোগ আমাদের দেশে শুরু হয়েছে অনেক আগেই।
বিগত সরাকারগুলোর আমলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া অনেক কোটিপতি আজ সরকারী দলের ভেতরে ভাল জায়গায় আছে। স্থানীয় বিএনপির নেতা এখন আওয়ামীলীগের ভালো পদে থেকে মিছিলের আগে স্থান করে নিয়েছেন। অবৈধ সম্পদ রক্ষা ও আরো অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য তারা খোলস পরিবর্তন করে আজ নামীদামী নেতা বনে গেছেন। গাজীপুর জেলায় এলাকা ভিত্তিক এমনও জায়গা আছে, যেখানে বিএনপির নেতা এখন আওয়ামীলীগের নেতা ও সমাজের কর্তাব্যক্তি। ধানের শীষের নির্বাচন করে এখন নৌকার মাঝি। এক নির্বাচন ধানের শীষ নিয়ে ও পরের নির্বাচন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনসেবা করার নজীর গাজীপুর জেলায় রয়েছে। বিএনপির সময় লুকিয়ে বড়লোক হওয়া কিছু মানুষ আওয়ামীলীগের সময় সম্পদ প্রদর্শন করছেন নিরাপদে। কারণ তারা এখন
আওয়ামীলীগের লোক। সরকারি দলের লঘু ব্যবহার করে নদী, পুকুর খালবিল জলাশয় বনভূমি সহ সরকারি জায়গাজমি দখলের পাশাপাশি জবরদখল করছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পদও। এই পদ্ধতিতে অটো বড়লোকদের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন।
এদিকে অনেক ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা ও কর্মী এখনো অসহায় জীবন যাপন করছেন আর বাধ্য হয়ে খোলস পাল্টানো কর্মহীন রাজনৈতিক বড়লোকদের হাতের লাঠি হয়ে কাজ করে জীবন বাঁচিয়ে রাখছেন। আওামীলগের সময় একাধিক খুন করেও বিএনপির কোন নেতা একদিনও হাজতবাস করেননি আবার আওয়ামীলীগের সময় আওয়ামীলীগের অনেক নেতা বিনাঅপরাধেও কারাগাভোগ করছেন, গ্রেফতারও হচ্ছেন। এই সবই হচ্ছে অটো বড় লোকদের ইশারায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক শ্রেনীর মানুষ বড় নেতাদের দরবারে কোন সুযোগে তৈরী করে প্রবেশ করে। জমজমাট দরবারে নেতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ করা ওই ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে নেতার মন জয় করে সুবিধা করে নেয়। কিছু দিন পর তিনিও বড় লোক হয়ে যান। আবার কিছু লোক নেতার সকল কর্মকে ভূয়সী প্রশসংসা করার দায়িত্ব পালন করেন। খুব ভাল লাগছে, জামাটা আপনাকে গিলে ধরেছে এমন প্রশংসার মধ্যে জামার ইস্ত্রি আছে,না ময়লাও ছিল, তা জানার দরকার নেই প্রশংসাকারীর। সব কাজের প্রশংসা করায় নেতারাও নিশ্চিন্তায় সব কাজ দ্রুত বেগে চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোনটা ভুল ও কোনটা সঠিক তা আর নেতার বুঝার উপায় নেই। প্রশংসাকারী সিন্ডিকেট বেষ্টিত কিছু নেতারাও আবার হঠাৎ করে মহাবিপদে পড়ে যায়। ক্ষমতাসীন নেতাদের দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এমন অনেক বিপদ তাদের জীবনকে অস্থির ও অপমানজনক করে তুললেও যখন উঠে দাঁড়ায় তখন আর অতীত মনে থাকে না।
রাজনীতির মাঠে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে অনীহার সংস্কৃতি এখন বড় বিপর্যয় ডেকে আনছে। কর্মহীন বড় লোকের সংখ্যা বাড়ছে। আর কর্মহীন বড়লোকের নেতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। মানুষ কর্মহীন বড়লোক হওয়ার দিকে বেশী করে ঝুঁকে পড়বে এতে লেখাপড়া করে ও ভাল কাজ করে জীবন গঠনের চিরায়ত পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়বে। মানে লেখাপড়া ছাড়া অটোপাসের সংখ্যার মত কর্মহীন বড় লোকের সংখ্যাও বাড়বে।
চলবে—