ঢাকা সফররত চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফিংগে আজ মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি এ আগ্রহের কথা জানান।
কয়েক ঘণ্টার সফরে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান জেনারেল ওয়েই ফিংগে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পর রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এ ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা ও উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ নিতেও আগ্রহী বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে চীন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও চীন কাজ করে যাচ্ছে।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজের ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভালো। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। চীন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলেও আশার কথা জানান।
এদিকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজ সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আন্ত: বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সফরকালে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ ও চীনের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময়, সশস্ত্র বাহিনী পর্যায়ে নিয়মিত মত বিনিময় অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় চীনের সহযোগিতার বিষয়ে ধন্যবাদ জানান।
আইএসপিআর আরও জানায়, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ সম্পর্ককে আরও উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি চলমান কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহায়তার প্রস্তাব দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
জেনারেল ওয়েই ফেংগির নেতৃত্বাধীন চীনা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদত বরণকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেনাসদরে সাক্ষাৎকালে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি), চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও-এএফডি), সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অফ অর্ডন্যান্স (এমজিও) সহ অন্যান্য জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন।