করোনা ভাইরাসে আগামী তিন সপ্তাহে ভারতে কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। এর পরে মৃত্যু কমে আসতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন (আইএইচএমই) পরিচালিত এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৬ই মে পর্যন্ত ভারতে প্রতিদিন এই ভাইরাসে কমপক্ষে ১৩ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন। ১লা আগস্টের মধ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৯ লাখ ৬০ হাজার। ওদিকে আগামী দুই সপ্তাহকে ভারতের জন্য নরক-সময় বলে অভিহিত করেছেন আকাশ হেলথকেয়ার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ড. শারাং সাচদেব। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। রাজধানী দিল্লিতে শুক্রবার মারা গেছেন ৩৪৮ জন।
ফলে প্রতি চার মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন। কর্নাটকের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা। শ্মশানে মৃতদেহের ঢল নেমেছে। ফলে সেখানে দাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের পরিবারের সদস্যদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা মৃতদেহ নিজেদের বাগানে বা কোনো খোলাস্থানে নিয়ে দাহ করছেন। সিঙ্গাপুরের অনলাইন স্ট্রেইটস টাইমস এবং অনলাইন ডেইলি মেইলে প্রকাশিত খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।
সোমবারও ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড করেছে। এদিন মারা গেছেন ২৮১২ জন। কিন্তু পূর্বাভাসে একদিনে কমপক্ষে ১৩ হাজার মানুষ মারা যাবেন বলে বলা হয়েছে। ফলে সোমবার যে সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা তার চারগুনেরও বেশি। আগের সপ্তাহের চেয়ে পরের সপ্তাহে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। আর দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তো পঞ্চমদিনের মতো বিশ্বরেকর্ড করেছে। সোমবার ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জন। করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছেন তাতে আগামী ১৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে কি পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত বা মারা যেতে পারেন তার একটি পূর্ভাভাস দিয়েছে আইএইচএমই। এখন পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ। তার মধ্যে কমপক্ষে এক লাখ ৯৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃতপক্ষে এসব সংখ্যা অনেক বেশি। আইএইচএমইর গবেষণা অনুযায়ী ভারতে প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, আগামী ১লা আগস্টের মধ্যে ভারতে করোনা ভাইরাসে মারা যেতে পারেন মোট ৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। কিন্তু যদি শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ জনসম্মুখে মুখে মাস্ক পরেন তাহলে এর মধ্যে ৮০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব। যেভাবে টিকা দেয়া হচ্ছে তাতে রক্ষা পেতে পারে আরো ৮৫ হাজার ৬০০ মানুষের জীবন।
এই প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ১লা আগস্টের মধ্যে সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে এই সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৫৪ লাখ। তবে এরকম প্রক্ষেপণ অল্প সময়ের জন্য নির্ভরযোগ্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতের অশোকা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর গৌতম মেনন। পদার্থ ও জীববিজ্ঞানের এই প্রফেসর ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, মাত্র ৫ দিনের পিক সময়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এমন প্রক্ষেণে অনেক অনিশ্চয়তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। কারণ, এসব বিষয়ের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত নয়।