যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ‘পালিয়ে গেছেন’ ভারতফেরত দশ করোনা রোগী। রোববার রাতে ও আজ দুপুরের মধ্যে তারা পালিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের অবহেলার কারণে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এতে করে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাসের ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
অবশ্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাত্র দু’জন রোগী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আর সিভিল সার্জন বলছেন, হাসপাতালে দেয়া নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলে তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার তারকচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল দশটা ৫৭ মিনিটে ভারত ফেরত কিছু রোগীকে ভর্তি করা হয়। এরপর রোববারও রোগী আসে। সবমিলিয়ে দুইদিনে দশজন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সবাইকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টার মতে, ভর্তি রোগীরা হলেন, যশোর শহরের বিমান অফিস মোড়ের আবুল কাসেমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৭), খালধার রোডের বিশ্বনাথের স্ত্রী মালা দত্ত (৫০), সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (১৯), একই গ্রামের একরামের স্ত্রী রোমা (৩০), প্রতাপকাঠি গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মমিন, রামকান্তপুর গ্রামের গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নাসিমা বেগম (৫০), বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫), ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের জনৈক মনোতোষের স্ত্রী শেফালি রানি, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রামরাইল গ্রামের আহম্মদ সানার ছেলে আমিরুল সানা ও একই জেলার রূপসা এলাকার শের আলীর ছেলে সোহেল (১৭)।
করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স লাবনী বিশ্বাস বলেন, ভারত থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসা দশজন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন।
কিন্তু আজ সকালের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি কোনো পরিবারে থাকে তার মাধ্যমে প্রথমে তার পরিবার এবং আশপাশের লোকজনও আক্রান্ত হতে পারেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে ‘পালিয়ে যাওয়া’ রোগীরা যদি ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বাহক হন তাহলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপকুমার রায় বলেন, ‘আমার জানা মতে হাসপাতাল থেকে দুইজন রোগী পালিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভারত থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে আনা হলে তা পুলিশ এস্কট করে দিয়ে যাবে। একইসাথে তাদের পাসপোর্ট পুলিশ হাসপাতালে জমা করবে। কিন্তু তার কোনোটাই করা হয়নি। কোনো রোগী যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার বিষয়ে আমি পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলব।
যোগাযোগ করা হলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘রোগী পালানোর কথা শুনে আমি আজ সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা হয়েছে। যে দশজন রোগী পালিয়েছে, তাদের নাম ঠিকানা সঠিক থাকলে তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।’
এই বিষয়ে এক প্রশের জবাবেœ কোতয়ালী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনার রোগী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’