চলমান লকডাউনের মধ্যে আজ রোববার থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণিবিতান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে গত শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস (দূরপাল্লাসহ), ট্রেন ও লঞ্চ তথা গণপরিবহন চালু হতে পারে। এ দিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি গতকাল এক বিবৃতিতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, চলমান লকডাউন শেষে ২৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) থেকে গণপরিবহন চালু হলে যাত্রীবাহী ট্রেনও চালাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তিনি বলেন, রেলপথও গণপরিবহন। যদি গণপরিবহন পুনরায় চালু হয়, আমরা ট্রেন চলাচল শুরু করব। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে।
এ দিকে গতকাল শনিবার বরিশাল সড়ক জোন, বিআরটিসি ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলমান লকডাউনের পর জনস্বার্থ বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, লকডাউন শিথিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর তা আবার চালুর কথা সক্রিয় বিবেচনার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রেখে যে ভাড়া নির্ধারণ ছিল, সেই ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল একগুচ্ছ বিধিনিষেধের আওতায় লকডাউন দেয়। এরপর এর মেয়াদ ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে তখন লকডাউন পালনে তেমন কঠোরতা দেখা যায়নি। পরে বিধিনিষেধ আরো কঠোর করে ১৪ এপ্রিল থেকে জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যা সর্বাত্মক লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল করা হয়। এ সময় গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে। শপিংমল ও দোকানপাট এই লকডাউনে বন্ধ থাকলেও আজ থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হলো।’
গত শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, শুধু মার্কেটই নয়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ আরো শিথিল হচ্ছে। চলমান বিধিনিষেধের সময়সীমা (২৮ এপ্রিল) পার হওয়ার পর নতুন করে আর এই কঠোর বিধিনিষেধ থাকছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হবে। চালু হবে গণপরিবহনও। সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’- এই বিষয়টির ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি যাতে আমরা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, সেই বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাইব, শতভাগ মানুষ মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। আর এটা সম্ভব হলে আমাদের আর কঠোরতার প্রয়োজন পড়বে না।’
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গণপরিবহন চালুর দাবি : এ দিকে চলমান লকডাউন (বিধিনিষেধ) শেষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে আগের ভাড়ায় যত সিট তত যাত্রী পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, এর আগে দুই দফা লকডাউনের পর গণপরিবহন চালু করা হলেও বেশির ভাগ গণপরিবহন যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেনি। ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া পরিশোধ করেও বেশির ভাগ গণপরিবহনে বাদুড়ঝোলা করে যাত্রী বহন করা হয়েছে। ৯০ শতাংশের বেশি গণপরিবহনে যত সিট তত যাত্রী বহন করে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হলেও সরকার কার্যত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে এই বর্ধিত গণপরিবহন ভাড়া করোনা সঙ্কটে কর্মহীন, আয়-রোজগারহীন দিশেহারা সাধারণ মানুষের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, এমন বাস্তবতা সামনে রেখে এবার গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হলে গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণও বেড়ে যাবে।
মোজাম্মেল হক বলেন, গণপরিবহনে বেশির ভাগ সময় চালক-হেলপার দুইজনে গণপরিবহন পরিচালনার কারণে এসব পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যায়নি। কেননা চালক গাড়ি চালানো ও হেলপার যাত্রী উঠানামা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ যেমনÑ বাসে উঠার সময় যাত্রীর হাতে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার দেয়া, মাস্কবিহীন যাত্রী উঠছে কিনা পর্যবেক্ষণ করা, কিছুক্ষণ পরপর যাত্রী উঠানামার হ্যান্ডেল বা হাতল স্যানিটাইজ করা, যাত্রী নামার পর খালি সিট স্যানিটাইজ করা, প্রতিটি বাস ছাড়ার আগে সব ক’টি আসন স্যানিটাইজ করা, যাত্রী নামানোর পর সব ক’টি আসন পুনরায় স্যানিটাইজ করার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তৃতীয় পক্ষকে দায়িত্ব দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
করোনার ভয়াবহ এই সঙ্কটকালে গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে জাতীয় দুর্যোগ বিবেচনায় নিয়ে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।