ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের লিচুগাছে ধরা আমটি মঙ্গলবার ছিঁড়ে ফেলেছেন একদল তরুণ। বিচিত্র এই ঘটনা দেখতে গিয়ে ঝামেলা ও বিতণ্ডার জের ধরে একদল তরুণ আমটি ছিঁড়ে পালিয়ে যান। তাদের ধাওয়া করেও ধরা যায়নি।
গাছের মালিকের দাবি, লিচুর থোকায় একটি আম ধরেছে—এই খবরে বহু মানুষ তা দেখতে আবদুর রহমানের বাড়িতে ভিড় জমান। আজ বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে তিন তরুণ সেখানে গিয়ে আমটি ছিঁড়ে পালিয়ে যান।
আবদুর রহমান জানান, গত শনিবার গাছে লিচুর থোকার পাশে আম দেখতে পাওয়ার কথাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লিচুগাছটি পাহারা দিতে শুরু করেন তিনি। আজ সকালেও লিচুগাছটি দেখতে এলাকায় ভিড় করেন অনেকে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সফিকুল ইসলামের ভাতিজা সোহেল রানা মোটরসাইকেলে করে আমটি দেখতে যান। ফেরার পথে আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে সোহেল রানার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে সোহেল রানা আঘাত পান।
তিনি জানান, ঘটনাটি ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম জানার পর তিনি তার (আবদুর রহমান) বোনকে ডেকে বলেন, এই আমের কারণে এখানে সমস্যা হচ্ছে। আমটি তিনি ছিঁড়ে ফেলবেন। এর ঘণ্টাখানেক পর তার বাড়িতে আসেন সফিকুল ইসলাম। তার পেছনে একটি মোটরসাইকেলে করে তিন তরুণও আসেন। লোকসমাগম ও লিচুগাছটি পাহারা নিয়ে সফিকুলের সঙ্গে আবদুর রহমানের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তরুণেরা গাছ থেকে আমটি ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। লোকজন তরুণদের পেছনে ধাওয়া করেও তাদের ধরতে পারেননি।
এ বিষয়ে বালিয়া ইউপির সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে আবদুর রহমানকে বলেছি, এখন করোনার প্রকোপ বেশি। এখানে যাতে লোকজনের ভিড় কম হয়। এ কথা শুনে তিনি পাল্টা বলেন, “আপনারা মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কী করেন? এসব আপনারা সামলাতে পারেন না?” এ নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক হওয়ার একপর্যায়ে কে আমটি ছিঁড়েছে, আমি তা বলতে পারছি না।’ তার পেছনে মোটরসাইকেল নিয়ে আসা তরুণদের তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন।
লিচুগাছে আম ধরার কথাটি জানার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের লিচুগাছটি পর্যবেক্ষণে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গাছের আমটি ছিঁড়ে ফেলার খবর পেয়ে তিনি বলেন, ‘গাছে আমটি আরও কয়েক দিন থাকলেই বোঝা যেত, লিচুগাছে আসলেই প্রাকৃতিকভাবে আমটি ধরেছে কি না। আমটি ছিঁড়ে ফেলায় ঘটনাটির বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা জানা সম্ভব হলো না।’
এর আগে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, ‘লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোজম সংখ্যা যদি এক হয়, তবে অনেক সময় ঘটতে পারে। তবে লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা অবিশ্বাস্য। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না হওয়ায় আম ও লিচুর গ্রাফটিংও সম্ভব নয়। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে, এমন উদাহরণ নেই। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।’