ঢাকা: সাংবাদিক জীবনবাজী রেখে খবর সংগ্রহ করে দেয়ার কারণে মানুষ খবর পায়। দেশ-বিদেশে মানুষ খবরগুলো জানতে পারে। সরকার খবর থেকে তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়। হারানো মানুষ তাদের প্রিয়জনকে ফিরেও পায়। সাংবাদিকের খবরের উপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধ মামলা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ও দেয়া হয়। রাজনীতিবিদরা কোন কথা বলে যখন ফেঁসে যান তখন কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের দোষারোপ করেন। সুখবরগুলো কম দিলে সাংবাদিকেরা গালি খায়। খারাপ খবর বেশী দিলেও বিপদ। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রন করার পরও যদি সাংবাদিক সুখবর কম দেয় তবুও বিপদ। পেশাগত কারণে সাংবাদিক হতাহত হলে কোন ক্ষতিপূরণ পায় না। কেউ পিটিয়ে আহত বা নিহত করলেও এতিম পরিবার কিছুই পায় না। বরং রক্তাক্ত অবস্থায় সাংবাদিক হাজতে থাকে আর আক্রমনকারী পুলিশরে সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে ঠান্ডা বাতাস খায়। আর সাংবাদিক সমাজের খন্ডিত অংশ প্রতিকার চেয়ে রাজপথে মানববন্ধন করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আর অন্যরা মশকারী করে।
কথায় কথায় সাংবাদিককে মেরে চালান করে দেয়া হয়, হাতে হাতকড়া লাগিয়ে টেনে হিঁচড়ে জেলে পুরা হয়। সরকার, ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতি প্রকাশ করলে বা অনুসন্ধান করতে গেলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের মামলা দেয় দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। কোন সাংবাদিক বিপদে পড়লে বা চিকিৎসা নিতে গেলেও দূর্নীতিগ্রস্থরা প্রতিশোধ নেয় কৌশলে। এসবের রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিকার নিশ্চিত করার রাস্তা কঠিন ও জটিল। তাই যুগে যুগে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানীর প্রতিকার সহ সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোন উদ্যোগ নেই। অবশ্য এর জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ অনেকের। যারা সরকারী দলের, তাদের সুরক্ষা এক রকম আর যারা সরকারের সমালোচনা করে, তাদের সুরক্ষার বদলে নির্যাতন।
জাতির বিবেক খন্ডিত হওয়ার কারণে বিবেকের টুকরো গুলো নানা জায়গায় পড়ে নানা রুপ ধারণ করে। তাই বিবেকের আর গুরুত্ব থাকে না।
প্রতিনিয়ত এই অবস্থার পরও জাতির উপর কোন দুর্যোগ নেমে আসলে সাংবাদিকেরা আগেই থাকেন জীবনবাজী রেখে। তবুও সাংবাদিকদের সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই সেটা মৃত্যুর আগে বা পরে। এমনকি পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে মহামারীতে আক্রান্ত বা মৃত্যু হলে সাংবাদিকের পরিবার কি পাবে, সেটাও বলা নেই। বরং ইদানিং দেখা গেলো, সাংবাদিকদের চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানও তাদের মেরে রক্তা করে। কোন প্রতিকার নেই। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, ‘ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেই অনেকে পাওনা পাননি।
ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা বলা হচ্ছে সাংবাদিকদের। ‘আওয়ার মিডিয়া, আওয়ার রাইটস’ নামের সামাজিক মাধ্যমের একটি মিডিয়া গ্রুপ করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জন ও উপসর্গ নিয়ে আরো ১৪ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩২৬ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের পরিবার কী কোনো ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন? জানতে চাইলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেই অনেকে পাওনা পাননি। আমরা বারবার বলার পর মালিকপক্ষ কিছু করছে না। শুধু কল্যাণ ফান্ড থেকে তিন লাখ টাকা করে পান। আমরা সরকারকেও এসব বিষয়ে অবহিত করেছি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোমবারের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পরিবারও এমন সুবিধা পাবেন। আর সাংবাদিকরা সুবিধা তো পাচ্ছেনই না উল্টা প্রতিষ্ঠান থেকে আগের পাওনাও দিচ্ছে না।