৫০ লাখ পরিবার পাবে আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তা, আরও তিনটি প্রণোদনা প্যাকেজ খুব শিগগির

Slider বাংলার সুখবর


করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় এ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঈদ উপহার দেওয়ার পাশাপাশি আরও তিনটি প্রণোদনা প্যাকেজ খুব শিগগির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।

জানা গেছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। প্রাথমিকভাবে এর মেয়াদ সাত দিন বলা হলেও পরবর্তী সময়ে তা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধসহ সাধারণ মানুষের চলাচলেও বিধিনিষেধ রয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের দরিদ্র শ্রেণি। তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের কিছুটা সাশ্রয় দিতে গতবারের মতো এবার আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। গতবার যারা এই সহায়তা পেয়েছে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তারাই এই সহায়তা পাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এ সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর মে ও জুন মাসে প্রথমবারের মতো করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছর আর্থিক সহায়তা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। দুস্থ সেজে প্রায় ৫ লাখ লোক সরকারের এ কর্মসূচি থেকে ১২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে এ অর্থ লোপাট বন্ধ করা সম্ভব হয়। ভুয়া তথ্য দিয়ে ৫ লাখ মোবাইল নম্বরধারী সরকারের সোয়া ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অর্থ বিভাগের এক অবস্থানপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

অবস্থানপত্রে দেখা যায়, ভুয়া তালিকায় নাম এসেছে সরকারি চাকুরে, অন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পেশা হিসেবে দেখানো হয়েছে বেদে, গৃহিণী, হিজড়া, পথশিশু, প্রতিবন্ধী, ইমাম, চা-শ্রমিক, চা দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, বেকার ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে- এমন ব্যক্তির নামও ছিল এই তালিকায়। ছিল পেনশনভোগীর নামও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে নগদ সাহায্য দেওয়ার এই প্রক্রিয়া কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো তালিকায় নানা গরমিল রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এসব তথ্যের সঠিকতা যাচাই করতে বিভিন্ন তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষাসহ তদন্ত করে। এতে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ জনের ভুয়া তথ্য পাওয়া যায়। তালিকায় দুই হাজার ৮৫৫ জন সরকারি কর্মচারীর নাম ছিল। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের মালিককেও দুস্থ দেখানো হয়। এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৫৭ জন। ছয় হাজার ৭৮৬ জন সরকারি পেনশনভোগীর নামও ছিল তালিকায়। দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯১৯ জনের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার লেখা হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, গত বছর অনিয়মের কারণে সহায়তা বন্ধ করে সরকার। কিন্তু নিজস্ব আইডেন্টিফিকেশনের মাধ্যমে সহায়তা করতে হবে। নিজস্ব মোবাইলের মাধ্যমে সুবিধাভোগীকেই তার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নাম্বার বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিতে হবে। কেউ যেন দুর্নীতির আশ্রয় নিতে না পারে বা ট্রাকিংয়ের সুযোগ না থাকে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত বছর এ খাতে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এবার তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত বছরের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার তালিকা রয়েছে, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষ। পরিবারগুলোকে টাকা দেওয়া হবে মূলত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে বিকাশ, রকেট, নগদের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হবে। অর্থাৎ নগদ সহায়তা হলেও কাউকে নগদে টাকা দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে এমএফএসগুলো বড় আকারের ভর্তুকি দেবে সরকারকে। টাকা পৌঁছানোর জন্য এমএফএসগুলো পাবে প্রতি হাজারে মাত্র ৬ টাকা। হাজারে ৬ টাকা হিসাবেই পৌঁছানোর মোট খরচ দাঁড়ায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এ টাকা সরকার বহন করবে। পরিবারগুলোর কোনো টাকা দিতে হবে না। তারা পুরো আড়াই হাজার টাকাই পাবে।

উল্লেখ্য, গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের পাঠানো ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের মধ্যে ২৮ লাখ মানুষের তালিকাই ছিল ভুলে ভরা ও ভুয়া। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৬ পরিবারে নগদ সহায়তা পাঠাতে সক্ষম হয়। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪০৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ভুল তালিকার জন্য বাকি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৪ পরিবারে নগদ সহায়তা পাঠানো স্থগিত রাখা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *