বাংলাদেশের আকাশে গতকাল পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ বুধবার থেকে ১৪৪২ হিজরি সালের রমজান মাস শুরু হয়েছে। আগামী ৭ মে পবিত্র জুমাতুল বিদা এবং ৯ মে ২৬ রমজান দিবাগত রাতে পবিত্র শবেকদর পালিত হবে। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান হয়। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ফরিদুল হক খান সভাপতিত্ব করেন। সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো: মুশফিকুর রহমানসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় ও শেষ রাতে সাহরি খেয়ে আজ বুধবার প্রথম দিনের রোজা পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তবে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ মাত্র ২০ জন মুসল্লিকে তারাবিহ নামাজ পড়তে সুযোগ দেয়ায় অনেকেই তারাবিহ না পড়তে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মুসল্লিরা জানান, পবিত্র রমজান মাস গুনাহ মাফের মাস। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। কিন্তু মসজিদে মুসল্লি সীমিত করে দেয়ায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারছেন না। এতে মনোকষ্টে আছেন তারা। সামাজিক দূরত্ব মেনে আগের মতো বেশিসংখ্যক মুসল্লিকে তারাবিহ নামাজ পড়তে সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে তারাবিহর নামাজের পাশাপাশি মসজিদে ইফতারির আয়োজন না করার সুযোগ থাকায় দরিদ্র মানুষ বিপাকে পড়েছেন। কারণ প্রতি বছর রমজানে বিভিন্ন মসজিদে ইফতারির আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দরিদ্র ছিন্নমূলের মানুষ ইফতারি গ্রহণ করতেন। কিন্তু এ বছর সে সুযোগ না থাকায় তারা হতাশ হয়েছেন।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় আঘাতে আজ থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে লকডাউন। ফলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত জনজীবনে শুরু হচ্ছে এবারের রমজান। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর এই লকডাউন চলবে আগামী এক সপ্তাহ। রোজার আগমনে চিরাচরিত নিয়মেই মুসলিম প্রধান আমাদের দেশে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। রোজার সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিটি পরিবারেই দেখা গেছে ব্যস্ততা। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বাইরে ব্যস্ততার পাশাপাশি নারী সদস্যরা ঘরে ঘরে নিচ্ছেন তাদের রোজার প্রস্তুতি। রমজান উপলক্ষে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেরও কাজের দৈনিক রুটিনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে সাধারণ লোকজনের প্রাত্যহিক কাজকর্মের রুটিনেও। রমজান মাসকে যারা আত্ম উন্নয়ন আর আত্মগঠনের মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারাও নিজেদের দৈনন্দিন কাজের রুটিনে আনছেন আমূল পরিবর্তন।
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি ছাড়াও সাহরি, ইফতার ও তারাবিহ নামাজের সময়কে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজেদের দৈনিক কাজের রুটিনে আনতে হচ্ছে পরিবর্তন। দিনের কাজের ফাঁকে বিশ্রামের সুযোগ নিয়ে রাতের ইবাদতের সময়ও বের করে নিচ্ছেন অনেক রোজাদার।
রাষ্ট্রপতির বাণী
বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বৈশ্বিক মহামারী করোনার এই সময়ে পবিত্র রমজান মাসে যথাযথ স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি মেনে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি সমাজের সচ্ছল জনগোষ্ঠীকে মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ ও দরিদ্র মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। রমজান উপলক্ষে তিনি দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছলতা ও সঙ্ঘাত পরিহার করি এবং জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি।
খেলাফত মজলিসের শুভেচ্ছা : পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। গতকাল এক যৌথ শুভেচ্ছা বাণীতে নেতৃদ্বয় বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। চারদিকে মৃত্যুর মিছিল চলছে। অন্য দিকে দেশে আলেম-উলামাদের ওপর সরকারের হামলা, মামলা, গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতনের ফলে এক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানে পরিপূর্ণ হকসহকারে সাওম পালনের মাধ্যমে আমাদের আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সহমর্মিতা ও আত্মত্যাগের শিক্ষায় সমৃদ্ধ হতে হবে।