গত ৩ এপ্রিল এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে অবকাশ যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হক। তিনি দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে ঘটনার পর প্রায় এক ডজন অডিও-ভিডিও ফাঁস হওয়ার কারণে প্রকাশ্যে এসেছে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের অনৈতিক কর্ম। তাঁর ‘মানবিক বিয়ে’ গল্পের অসারতাও প্রমাণিত হয়েছে।
মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা ওই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা (২৭)। আট ভাই-বোনের মধ্যে ঝর্ণা দ্বিতীয়। মামুনুল হক ওই সময় নারীর নাম আমেনা তৈয়্যেবা বললেও তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা।
জান্নাত আরা ঝর্ণার আগে বিয়ে হয়েছে, সেই ঘরে আব্দুর রহমান ও তামীম নামে দুজন পুত্র সন্তান আছে। এবার হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার লেখা ২০০ পৃষ্ঠার ৩টি ডায়েরি খুঁজে পাওয়া গেছে। যাতে রয়েছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডায়েরিগুলো তার মায়ের বলে নিশ্চিত করেছেন ঝর্ণার পুত্র আব্দুর রহমান।
ঝর্ণার ডায়েরিতে লেখা, ‘আমাকে বিয়ে না করেই গ্রীনরোডের একটি বাসায় রাখেন মামুনুল হক। আমাকে খরচের টাকাও দিতেন। কিন্তু বিয়ে করে স্ত্রী বানাননি।’
ঝর্ণার ডায়েরিতে লেখা, বিয়ের আশ্বাসের বিনিময়ে অবৈধ মেলামেশা করতেন মামুনুল যা মেনে নিতে পারেননি ঝর্ণা। বিয়ে না করে দীর্ঘদিন ধরে তার সাথে মেলামেশা করেছেন মামুনুল হক। বিবাহবহির্ভুত মেলামেশার অনুশোচনার কথাও উঠে এসেছে ঝর্ণার ডায়েরিতে। ডায়েরির পাতায় পাতায় রয়েছে মামুনুলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের আর্তনাদ।
ডায়েরিতে ঝর্ণা লেখেন, আমি তাকে ভালোবাসি না ঘৃণা করি বুঝতে পারছি না। কিন্তু সে আমার জীবনকে নরক বানিয়ে ফেলছে।
ডায়েরিগুলো তার মায়ের বলে নিশ্চিত করে ঝর্ণার বড় ছেলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘একজন মহিলার সন্তানের জন্ম সাল। তার বিয়ে বিচ্ছেদ ও তার মনের দুঃখের কথা কি অন্য কেউ লেখে। এটা তার বাসা থেকে পাওয়া। আর এটা আমার মায়ের ডায়েরি।’
ঝর্ণা পুত্র আরো বলেন, আমাকে সে (ঝর্ণা) বলেছিলো আমার কিছু ব্যক্তিগত ডায়েরি আছে। আমি ডায়েরির বিষয়ে শিওর কারণ এটা আমার মায়েরই হাতের লেখা।
ডায়েরিতে ঝর্ণা বিয়ে প্রসঙ্গে লিখেছেন, মামুনুল হক বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন তিনি পূরণ করেননি।
এ বিষয়ে ঝর্ণা পুত্র ডায়েরির রেফারেন্স দিয়ে বলেন, তাদের মধ্যে একটি এ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ে হয়নি।
ঝর্ণা পুত্র আবারও বললেন, কাউকে বিশ্বাস করার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করার জন্য। কারণ মুখোশধারী মানুষকে দাড়ি টুপিতে চেনা যায় না।
মামুনুল হকের বিচার দাবী করেন ঝর্ণার বড় ছেলে আব্দুর রহমান।
কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চান মামুনুল হক। সেখানে তিনি স্বীকার করেন গত কয়েক দিনে ফাঁস হওয়া ফোনালাপ তারই ছিল। আত্মপক্ষ সমর্থন করে মামুনুল বলেন, ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করা যায়।’
উল্লেখ্য, ৩ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক একজন নারীসহ অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর কক্ষটি ঘেরাও করেন। যদিও মামুনুল হক সঙ্গে থাকা নারীকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে হেফাজতের একদল নেতা–কর্মী, মাদ্রাসাছাত্র মিছিল নিয়ে এসে রয়েল রিসোর্ট নামের ওই অবকাশযাপন কেন্দ্রটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।