দেশের হাওরাঞ্চলের নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গত রোববার রাতে বয়ে যাওয়া আচমকা গরম বাতাসে কমপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। তবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জমির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ হবে। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে (একেক এলাকা এক সময়) রাত ১১টা পর্যন্ত হঠাৎ বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে ওইসব এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ধানের ক্ষেত পুড়েও গেছে। এতে নিঃশ হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, পরশু দিন রাতে হঠাৎ গরম বাতাস বয়ে যায়। যেসব ধানক্ষেতে ফুল আসছে, যেখান দিয়ে বাতাস বয়ে গেছে সে জায়গায় ধানের ফুলের রেণুটা পুড়ে গেছে। যার ফলে পরাগায়ন আর হবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এবার ৪৮ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের টার্গেট ছিল। আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। সুতরাং এই ক্ষতি সামগ্রিকভাবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো প্রভাব পড়বে না। গতবারের চেয়ে এবার ফলন আরো ভাল হবে আশা করি। কিন্তু যেসব কৃষকের ক্ষতি হলো এটাই বিষয়। আর যদি কোনো দুর্যোগ না হয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো ইনশা আল্লাহ।
স্থানীয়রা এটিকে লু হাওয়া বললেও আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে এখন যে তাপমাত্রা রয়েছে, তাতে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। লু হাওয়া বা গরম বাতাস বয়ে যেতে হলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হতে হবে। দেশে এখন পর্যন্ত লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এগুলো হলে ছোট এলাকায় হয়, স্থানীয়ভাবে। তবে তাপমাত্রা বেশি থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবার গত দুইদিন ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। তাই এটা সম্ভব না। এটাকে লু হাওয়া বলা যাবে কিনা-জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ ‘আপনি বলতে পারেন যে, কিছুক্ষণ গরম বাতাস বয়ে যাওয়ায় যেসব জায়গায় ধানের ফুল অবস্থায় ছিল, সেই জায়গায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, আকস্মিক বয়ে যাওয়া লু হাওয়া বা গরম বাতাসের তোড়ে কিশোরগঞ্জে বিপুল পরিমাণ খেতের ফসল পুড়ে গেছে। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়নের কৃষক পালন মিয়া। এই চাষি ধান আবাদ করেছিলেন ছয় একর জমিতে। আশা করছিলেন ধান পাবেন কমছে কম ৪০০ মণ। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে নষ্ট হয়েছে কৃষক পালন মিয়ার জমির ফসল।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ১১টার দিকে। ঝড় শুরুর কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ শুরু হয় গরম বাতাস। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরের ধান। কৃষক পালন মিয়া জানান, বছরের একমাত্র ফসল ধান চাষের ওপর নির্ভর করেই সারা বছর চলে তার পরিবার। কিন্তু এইবার সব শেষ হয়ে গেছে। রায়টুটী এলাকার তলার হাওরে ১২ একর জমি আবাদ করেছিলেন কৃষক আ: হেকিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ধানের দাম বেশি পাইছি, হের লাইগ্যা এইবার আরো বেশি কইরে জমি করছি। জমির মইধ্যে ফসলও অইছিন বালা। কিন্তু গত রাইতেই ১০ মিনিডের একটা গরম বাতাসে সব পুইড়ে ছারকার কইরে দিসে। আমার সত্তর বছর বয়সে এই যাইত্তে বাতাস আমি জীবনেও দেখছি না। সহালে ঘুমেত্তে উইট্টে জমিতে গিয়া দেহি সব শেষ। ঋণ কইরে জমি করছিলাম। অহন পুলাপান লইয়াই কেমনে চলমু আর ঋণ কেমনে পরিশোধ করমু এই চিন্তায় আর বালা লাগতাছে না।’ একই এলাকার কৃষক মতি মিয়া বলেন, ‘গতকাইল বিহালেও জমির ফসল দেইখ্যা মনডার মাঝে আনন্দ আছিন। সকালে জমিত গিয়া ফসলের এই অবস্থাডা দেইখ্যা কইলজাডা ফাইট্টে গেছেগা। জমিতে আর যাইতাম না নিয়ত করছিলাম। অহন আফনেরা আইছুইন, হের লাইগ্যা জমিডার ক্ষতি দেহাইতাম আইছি। আমরার আর যাওয়ার জায়গা নাই। এই করোনার মাইঝে অহন তো ডাহা গিয়াও কিছু কইরে খাইতাম ফারতাম না।’
জেলার ১৩টি উপজেলার হাওরে মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বোরো ধানের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে তিন হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ধান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ছাইফুল আলম জানান, বৃষ্টিবিহীন ঝড়ো বাতাসে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরের ধানের গাছগুলো এখন মিল্কিং স্টেজে (দুধ অবস্থায়) আছে। এই সময়ে প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম বাতাসে ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা হাতে পেলে সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত পাঠানো হবে।’
ধানের ক্ষেত নষ্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কাশিয়ানীতে : এক রাতের মধ্যে শত শত হেক্টর জমির ধান সবুজ থেকে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, লু হাওয়ার কারণে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোটালীপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে গরম হাওয়া বয়ে যায়। এতে উপজেলার কান্দি, পিঞ্জুরী, হিরণ ও আমতলী ইউনিয়নের প্রায় ছয় থেকে ৭০০ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
পূর্ণবর্তী গ্রামের কৃষক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমি এবার ১৭ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। গতকাল বিকেলে অধিকাংশ জমিই ঘুরে দেখেছি। সব জমির ধান ভালো ছিল। আজ সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখি সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমার জমির ধানই নয়, পুরো পূর্ণবর্তী গ্রামের দক্ষিণ পাশের সমস্ত বিলের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।’
আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান শেখ বলেন, ‘সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার সঙ্গে প্রায় অর্ধশত কৃষকের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, আমতলী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া বিলে তাদের জমির ধান এক রাতেই নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায় বলেন, গরম বাতাসে ধানের শীষগুলো শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রায় ছয় থেকে ৭০০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এতে কৃষকদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সে বিষয়ে আমরা মাঠে কাজ করছি।’
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, গত সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। জমিতে গিয়ে দেখি ধানগুলো সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর টুঙ্গিপাড়ায় আট হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘গরম বাতাসে জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী ও সদর উপজেলার বোরো ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছে। বিষয়টি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জানানো হয়েছে। তারা মাঠ পরিদর্শনে নেমেছেন।’
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম বাতাসে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমির ধান (ফুল অবস্থায়) সবুজ থেকে সাদা হয়ে ধানের শীষ নষ্ট হয়ে গেছ। তবে কৃষকদের মতে, ধান নষ্ট হওয়া জমির পরিমাণ আরো বেশি। বুধবার সকালে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের (ব্রি) কীটতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পান্না আলী বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের আহ্বানে আমরা একটি পর্যবেক্ষণ দল এসেছিলাম। পর্যবেক্ষণ শেষে ও কৃষকদের ভাষ্য মতে, কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম বাতাস হওয়ার কারণে ধান শীষগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এর আগে গত মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমির ধান পর্যবেক্ষণ করেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের (ব্রি) কীটতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পান্না আলী, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজী শিরিন আক্তার জাহান ও উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হীরেন্দ্র নাথ বর্মণ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলায় চলতি বছর ১৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে গরম বাতাস হওয়ায় উপজেলার নলকুড়া, রাংটিয়া, ডেফলাই, কাংশা, নওকুচি, গান্ধীগাঁও, জামতলী, হালচাটি, বগাডুবি এলাকার ৫০ হেক্টর জমির বোরো শীষ চিটায় পরিণত হয়ে সাদা হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে কিনা তা নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।
উপজেলার জামতলী এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, রোববার এমন গরম বাতাস উঠে ছিল যে, বাইরে থাকা যায়নি, ঘরেও খালি গায়ে থাকতে কষ্ট হয়েছে। এ গরম বাতাসে আমাদের ধান সব শেষ, এখন আমরা সারা বছর খাব কী?
উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম গরম বাতাসে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কৃষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের সাহায্যের জন্য সরকারের নিকট সাহায্যের আবেদন করছি।
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় লু হাওয়ায় বিপুল পরিমাণে ধানের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকের জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল লু হাওয়ায় (গরম বাতাস) আক্রান্ত বোরো ফসল সরেজমিন পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ফরিদপুর অঞ্চল, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মনোজিত কুমার মল্লিক। পরিদর্শনকালে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি, গোপালগঞ্জের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. অরবিন্দ কুমার রায়, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ আ: কাদের সরদার, জেলা কৃষি প্রকৌশলী শফীকুর রহমান, কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায়, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো: মিলন ও কৃষিবিদ আরাফাত জামিল, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার কৃত্তিবাস পান্ডে, উপসহকারী কৃষি অফিসার পার্থ প্রতীম বৈদ্য ও দীনেশ জয়ধরসহ প্রমুখ।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে আকস্মিক প্রবল দমকা গরম ঝড়ো হাওয়ায় বিনষ্ট হয়ে গেছে হাজার হাজার উঠতি বোরো ফসল। একই সাথে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে কৃষক-কিষাণীদের স্বপ্নসাধ। গত রোববার সন্ধ্যায় প্রবল দমকা গরম ঝড়ো হাওয়ায় জেলার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়ায় বোরা ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। হাওরাঞ্চলে এখন ফসলহারা কৃষক-কিষাণীদের বুকফাটা আর্তনাদ চলছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে বোরো ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪২০ হেক্টর বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কী কারণে কেন এমনটি হলো তা কৃষিবিদরাও নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। তবে বিনষ্ট হওয়া ধানের নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পরখ করে এর কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে হাওরাঞ্চলেই ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ১৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির ধান।
চলতি বোরা মৌসুমে হাওরাঞ্চলে বাম্পার ফলনের আশা করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু গত রোববারের আকস্মিক ঝড়ো হাওয়ায় কৃষকদের স্বপ্নসাধ ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। গরম ঝড়ো হাওয়ায় ধানগাছ সাদা রঙ ধারণ করে চিটা হয়ে গেছে। সুদের ওপর ঋণ নিয়ে ফসল ফলিয়ে গোলায় তোলার আগেই গরম দমকা ঝড়ো হাওয়ায় সেই ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষক-কিষাণীরা ফসলের মাঠে বুক চাপড়ে মাতম করে চলেছেন।