বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বললেন, ভারত ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলে আমরা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। গতকাল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠানমালার সমাপনীতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে হিন্দি ভাষায় বক্তৃতা করেন। তার বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টুইট করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে। তার একটি টুইট ছিল এমন- ‘আমাদের উভয় দেশের জন্য একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নেরও অংশীদার। আমরা লক্ষ্য যেমন ভাগাভাগি করি, তেমনি চ্যালেঞ্জগুলোও।’ মোদি তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাণিজ্য ও শিল্পে যেখানে আমাদের জন্য একই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই সন্ত্রাসবাদের মতো সমান বিপদও রয়েছে।
এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে। তার ভাষায়- ‘আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং ওদের মোকাবিলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে, এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি।’ মোদি বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছেলিনে, যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে।’ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের ইতিহাস তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের এমন সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যা কোনোভাবেই ভাঙবে না। কোনো কূটনীতির চালের শিকার হবে না। একাত্তরে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে ভারতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে নিজের গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্যটিও তুলে ধরেন মোদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় সাজানো বক্তৃতায় মোদি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকেও কিছু অংশ বাংলায় উচ্চারণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে আমিও আন্দোলন করেছিলাম: বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের সম্পৃক্ততার বর্ণনা দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের জনগণের মতো ভারতের জনগণের মধ্যেও স্বাধীনতার আকুলতা ছিল। আমাদের যারা শত্রু তারা বাংলাদেশেরও শত্রু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে আমি ও আমার বন্ধুরা সত্যাগ্রহ (আন্দোলন) করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকেই আমার সঙ্গে এখানে আছেন। আমার জীবনের প্রথম আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ। তখন আমার বয়স ছিল ২০-২২ বছর। মোদি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে শামিল হওয়ায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেলেও গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এখানে যতটা ইচ্ছা ছিল, ততটাই ছিল ওপারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে সমর্থন ছিল। ভারতের প্রতিটি কোনা থেকে, প্রতিটি দল বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন দিয়েছিল জানিয়ে মোদি বলেন, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াস ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল সর্বজনবিদিত। মোদি বলেন, আজ স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এবং সকল ভারতীয়দের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সবাইকে এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শিক্ষাবিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ, ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার এবং শফিউরকে স্মরণ করে মোদি বলেন, বাংলাদেশের ভাইবোনদের পাশে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসী সৈন্যরা মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছিলেন, আত্মত্যাগ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে খুব বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ, জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা, গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং, ক্যাপ্টেন মোহন নারায়ণ রাও সামন্তসহ এমন অনেক বীর রয়েছেন, যাদের নেতৃত্ব ও সাহসের কাহিনি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধ ও নৃশংসতার চিত্রগুলো আমাদের বিচলিত করতো এবং রাতের পর রাত বিনিদ্র করে রাখতো। অপারেশন সার্চলাইটের নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের যতটা সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। বক্তৃতায় অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং প্রণব মুখার্জিকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন মোদি। সেদিন বাজপেয়ী বলেছিলেন, ইতিহাসে একটা নতুন দিশা দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রণবদা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ধৈর্য, প্রতিজ্ঞা ও আত্মসংযমের প্রতীক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুই দেশের লাখ লাখ মানুষের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দুই দেশের লক্ষ্য এক এবং প্রচেষ্টাও এক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। আমাদের সম্পর্ক মজবুত করতে তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। মোদি বলেন, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, পারস্পরিক বিশ্বাসে সমাধান হতে পারে। জমি হস্তান্তর চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। করোনাকালেও তালমিল রেখে কাজ করেছি। বাংলাদেশে কাজে লাগছে মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিন। অনুষ্ঠানে গোবিন্দ হালদারের লেখা গান- ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’ মোদির মুখে বাংলায় শুনে সবাই হাততালি দেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জোরালো কণ্ঠস্বরে উচ্চারণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের ভাবনা স্মরণ করার দিন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করছে বলে জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, এই মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে স্মরণ করার দিন। মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা ছিল এখন সেটিকে আবারো মনে করার সময়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদি বলেন, ‘আমাদের ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, আমরা শেখ মুজিবুরজীকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি।’ উল্লেখ্য, ভারতের সরকার বঙ্গবন্ধুকে যে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে, সেটি মোদির হাত থেকে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। তিনি আবার ‘মুজিব চিরন্তন’ স্মারক মোদির হাতে তুলে দেন।
স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না: প্রেসিডেন্ট
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না। গতকাল ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে প্রেসিডেন্ট বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের ও সম্মানের। কারণ ১৯৭১ সালে মার্চের এই দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পাওয়া আবদুল হামিদ দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না। ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ এই থিমে শুক্রবারের আয়োজনের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। জোড়া উদ্যাপনে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয় ১৭ই মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে। গতকাল স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে তা শেষ হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের এই আয়োজনে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্যাপন আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানা ও বোঝার জন্য জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এই উদ্যাপনকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম এবং তার নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাভাষা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও যাতে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে দেশটির সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি আশা করেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আমি আশা করি অচিরেই অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যুরও সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভারতের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সমপ্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আবদুল হামিদ বলেন, গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনকারী জাতি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই। জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাবো- মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।
ভারতের জনগণ সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকে: প্রধানমন্ত্রী
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের কোটি শরণার্থীকে দেশটি আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে অস্ত্র-গোলাবারুদও সরবরাহ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লাখ শহীদের পাশাপাশি ভারতের অনেক সেনাসদস্যও প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ১০ দিনের আয়োজনের সমাপনী দিনে ভারতের সেই অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের এই অবদানের জন্য ভারত সরকার ও ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। গতকাল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, দলমত নির্বিশেষে ভারতের জনগণ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয় সেটি হলো বাংলাদেশ। তারা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকে। তাই ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ভৌগলিক সেতুবন্ধন রয়েছে। দুই দেশের সরকার ও জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছিল। গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাটের শিকার হয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ভারত সেই শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা যারা অংশ নিয়েছেন, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারত, অস্ত্র সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছে। আমি ভারতের জনগণ ও সরকারের কাছে বাংলাদেশের জনগণ ও আমার নিজের পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আজকের এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এই আয়োজনকে মহিমান্বিত করেছেন। বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমার পক্ষ থেকে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভারত সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত করেছে। এ জন্যও ভারত সরকার ও নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি মনে করি এই পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একজন যোগ্য নেতা ও গান্ধীজীর প্রকৃত অনুসারীকে সম্মানিত করেছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও দুই দেশের কূটনীতির ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশ বেশকিছু যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই দেশের দুই মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ভারত সরকার ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী’র উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের শুভ মুহূর্তে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের এ শুভ মুহূর্তে আসুন প্রতিজ্ঞা করি সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করবো। দক্ষিণ এশিয়াকে উন্নত-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছি। বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গান্ধী শান্তিপদক গ্রহণ করেন শেখ রেহানা: এদিকে অনুষ্ঠানে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ভারত সরকারের দেয়া গান্ধী শান্তিপদক গ্রহণ করেন শেখ রেহানা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত থেকে তিনি এ পদক গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনাও তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। গত ১৫ই মার্চ ভারত সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২০২০ সালের গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই পুরস্কার ঘোষণা করে। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেশটির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উত্তরণে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। গান্ধী শান্তি পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি ছাড়া বিচারকমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা হলেন- ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের নেতা, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এবং সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সামাজিক সেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিন্ধ্যেশ্বর পাঠক। গত শুক্রবার বৈঠকে বিচারকমণ্ডলী ২০২০ সালের পাশাপাশি ২০১৯ সালের পুরস্কার প্রাপকের নামও চূড়ান্ত করেন। ২০১৯ সালের পুরস্কার দেয়া হয় ওমানের প্রয়াত সুলতান বিন সায়েদ আল সায়েদকে। পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি রুপি। সঙ্গে দেয়া হয় মানপত্র ও ঐতিহ্যপূর্ণ হস্তশিল্প সামগ্রী। ১৯৯৫ সাল থেকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। অতীতে গান্ধী শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন তানজানিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ার, নেলসন ম্যান্ডেলা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, রামকৃষ্ণ মিশন, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো উন্মোচন: এদিকে, গতকালের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো উন্মোচন করা হয়। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে লোগো উন্মোচন করা হয়। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো কনসেপ্ট ও ডিজাইন করেছেন রামেন্দু মজুমদার ও প্রদীপ চক্রবর্তী। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠান টেলিভিশন, বেতার, অনলাইন মিডিয়া এবং স্যোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করে। আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে ভারতের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে নবনির্মিত রাগ ‘মৈত্রী’ পরিবেশনা, ‘পিতা দিয়েছে স্বাধীন স্বদেশ, কন্যা দিয়েছে আলো’ শীর্ষক থিমেটিক কোরিওগ্রাফি। ‘বিন্দু থেকে সিন্ধু’ শীর্ষক তিনটি কালজয়ী গান, ঢাক-ঢোলের সমবেত বাদ্য ও কোরিওগ্রাফি সহযোগে ‘বাংলাদেশের গর্জন: আজ শুনুক পুরো বিশ্ব’ এবং সবশেষে ফায়ার ওয়ার্কস ও লেজার শো’র মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় নেতাদের সাক্ষাৎ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে জোটের একটি প্রতিনিধিদল নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছাবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রমুখ। এর আগে ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সিনিয়র চার জন নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকটি অন্তত ২৫ মিনিট স্থায়ী হয় বলে দলটির নেতারা জানান। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ৫৪ নদীর পানি, তিস্তা ইস্যু, ভিসা, কানেক্টিভিটি, ছাত্রদের স্কলারশিপ বৃদ্ধিকরণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাপার প্রতিনিধি দলে ছিলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। বৈঠকের বিষয়ে জাপা মহাসচিব জানান, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আমন্ত্রণ দিল্লি থেকেই জাপার কাছে এসেছে। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাবলু বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন, আমরা তো অলরেডি এসব বিষয়ে কথা বলেছি। এই বিষয়গুলো কনসিডারেশন করা হবে। বৈঠকে জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গও উঠে আসে কথাক্রমে, জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার মন্তব্য, এরশাদ সাহেবের সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যে সুসম্পর্ক, তা বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরাও জানিয়েছি, এই সম্পর্ক আগামী দিনে ধারাবাহিক থাকবে। এদিকে, শুক্রবার বিকালে জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব ও মুজিব জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতারা। এ সময় জাতীয় পার্টি নেতারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকৃত্রিম সহায়তা, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন, করোনাকালে বাংলাদেশকে টিকা ও অ্যাম্বুলেন্স দেয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টনে বাংলাদেশ যেন ন্যায্য হিস্যা পায়, এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন বিরোধী দলের নেতারা। এছাড়া অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান ও স্কলারশিপ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়। দু’দেশের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরালো হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতীয় পার্টি নেতারা। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব অক্ষয় হয়ে থাকবে। ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।