‘যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না আমার তখন খুব হাসি পায়, মায়ের জাত নিয়ে কি আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে।’
কথাগুলো লিখেছেন বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা জেলার মীরপুর হাইওয়ে পুলিশে কর্মরত আছেন।
উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন উর্মী দেবের সাথে। উর্মী আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি)
সম্প্রতি এই দম্পতির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তাদের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। সবাই তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উজ্জ্বল ঘোষ জিতু তার স্ত্রী উর্মী দেবের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ওই পোস্টে উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু লিখেন, ‘পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা উপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারো চাকরি হয়নি। আমার আর আমার সহধর্মিণীর অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন।’
‘যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না আমার তখন খুব হাসি পায় মায়ের জাত নিয়ে কী আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা যিনি কি-না আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেব দম্পতির বিয়ে হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। নিজেদের পছন্দ হলেও তাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিকভাবে।
এ বিষয়ে উজ্জ্বল ঘোষ জিতু জানান, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। বাবা ছিলেন একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিতুই বড়। উপ-পরিদর্শক পদে যোগদান করতে তিনি ট্রেনিং শুরু করেন ২০১৮ সালে ২৭ জানুয়ারিতে। পুলিশের ট্রেনিং শেষ করেন ২০১৯ সালে। এর আগে থেকেই পরিচয় হয় এএসপি উর্মী দেবের সাথে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারিতে এসআই পদে উজ্জ্বল ঘোষ জিতুর পুলিশের চাকরি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে দু’জনের মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা হয়। একপর্যায়ে একে অপরকে পছন্দ করেন। বিষয়টি যার যার পরিবারকে জানালে পরিবারের সদস্যরা আলাপের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।
জিতু বলেন, ‘অন্যান্য পোস্টের মতো ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। পোস্টটি এভাবে ভাইরাল হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুখী। আমার স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লোভ ও নিরহঙ্কার।’
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেব বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে। আমার বাবা একজন আইনজীবী, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমিই বড়। বিসিএসের পর এএসপি পদে চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং আখাউড়া সার্কেলেই। ছবিটি সে (স্বামী) আমার অফিসে এসে তুলেছিল। ছবির বিষয়ে আমার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা ফোন করে জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, আমার স্বামীর সাথে চাকরিতে যোগদান করার পর পরিচয়। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদাভাবে চালাতে হয়। যেন একটির কারণে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই পেশায় দু’জন থাকলে ভালো হয়, একজন আরেকজনেরটা সহজে বুঝতে পারেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি উর্মী দেব বলেন, ‘আমরা যখন বিয়ে করি তখন দু’জনই চাকরিজীবী। আমরা বুঝে শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। তাই আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রত্যাশা করছি। তারপরও প্রতিটি দম্পতির ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা হতে পারে। তখন আমরা দু’জন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোনো একটি সম্পর্ক যখন পরিণতি পায়, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমাদের জীবন একটি, সব কিছু হিসাব-নিকাশ করে করা যায় না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরিহার করতে হয়। শিক্ষিত মানুষ হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি যদি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মনমানসিকতা বদলাতে হবে।
সূত্র : ইউএনবি