সুনামগঞ্জ: হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে । বাড়িঘরের পাশাপাশি মন্দিরেও হামলা চালানো হয় বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।
গতকাল সকালে ওই গ্রামে হামলার সময় ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান লোকজন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। জানা গেছে, দিরাই উপজেলা সদরে হেফাজতে ইসলামের জনসভার পরে নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামের এক তরুণ ফেসবুক আইডি থেকে আল্লামা মামনুল হককে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেয়। মঙ্গলবার রাতেই ওই তরুণকে আটক করেছে শাল্লা থানা পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ই মার্চ দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আসেন মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতৃবৃন্দ। তিনি সমাবেশে নানা কথাবার্তা বলে যান। এ ঘটনায় গতকাল ক্ষুব্ধ হয়ে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী নেতা মামুনুলের সমালোচনা করেন তিনি। এ ঘটনাকে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ এনে ওই এলাকার হেফাজত নেতার অনুসারীরা রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাতেই ঝুমন দাস আপনকে আটক করে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকাল ৮টায় দিরাই উপজেলার নাচনি, চণ্ডিপুর, সন্তোষপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ দা, রামদা, লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই গ্রামে হামলা চালায়।
এ সময় গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে থাকা লোকজন এবং গ্রামের দুর্গামন্দির, কালী মন্দির, শিব মন্দির, বিষ্ণু মন্দিরের পুরোহিতরাও গ্রাম ছেড়ে হাওরের দিকে চলে যান। হামলাকারীরা সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দিরাই-শাল্লার কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা অমরচান দাস বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাম নোয়াগাঁওয়ে কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গ্রামবাসী পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে এমন ঘটনায় আমরা হতবাক। গ্রামের সজল চন্দ্র দাস বলেন, আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘরের সবকিছু লুটপাট করা হয়েছে।
অসীম চক্রবর্ত্তী জানান, গ্রামের সবকিছু বিনষ্ট করেছে হামলাকারীরা। বাড়ির মালামাল ও বাড়িতে অবস্থিত প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির ভাঙচুর করে। এ বিষয়ে হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বলেন, গ্রামের বেশকিছু বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। টাকা পয়সা স্বর্ণালঙ্কারসহ বহু মালামাল লুট হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দুপুরে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বললেন, মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় নোয়াগাঁওয়ের আশপাশের গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। রাতে স্ট্যাটাস দানকারী ঝুমন দাস আপনকে আটক করা হয়। সকালে মামুনুল হকের সমর্থকরা ওই গ্রামে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে। বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
বিকালে উপজেলার ধারাইন বাজারের পাশের মাঠে উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানীয় হেফাজতের নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। এ ধরনের হামলার ঘটনা আর ঘটবে না এবং এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে বৈঠকে উপস্থিত সকলে অঙ্গীকার করেন।
এদিকে, হামলার খবর জানালেও পুলিশ দেরিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের লোকজন। তারা এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে নোয়াগাঁও গ্রামের গোপেন্দ্র দাসের পুত্র ঝুমন দাস আপন। সে তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মামুনুল হককে নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত স্ট্যাটাস দেয়। এর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হলে পুলিশ জনতার সহযোগিতায় ১৬ই মার্চ রাতে শাশখাই বাজার থেকে ঝুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কটূক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে ১৫/২০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
আপনার মতামত দিন
নাম