বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন সেই দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর খিলাগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনের সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সারাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই সভা করছি অত্যন্ত চাপের মুখে। মঙ্গলবার রাত ১২টায় বলা হয়েছে মোহাম্মদপুরে সভা করতে দেওয়া যাবে না, ওখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। অথচ তারাই আগে সেখানে অনুমতি দিয়েছিল। রাত ১২টায় এখানে অনুমতি দিয়েছে। আমি মির্জা আব্বাস, তার সহধর্মিণী আফরোজা ভাবি ও তাবিথ আওয়ালকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে এত অল্প সময়ে তারা এই সমাবেশের আয়োজন করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। এত বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে আর আসেনি। আমরা দেখছি আমাদের যে অধিকারগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেড়ে নিয়েছিল, আজ এই সরকার একই কায়দায় আমাদের সেই সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা কি ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ছয়জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন, তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। ভোটের দিন তাদের সবাইকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের পছন্দমতো ফলাফল ঘোষণা করেছে। এটা শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, ২০১৪’র নির্বাচনে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। আমরা নির্বাচনে অংশ নেইনি। ২০১৮-তে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে চলে গেছে। লজ্জা হয়, চিফ ইলেকশন কমিশনার যখন বলেন যে ভোট সুন্দর হয়েছে, সুষ্ঠু হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এত ভয় কেন? জনগণের কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয় কেন? জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার বন্ধ করা হয় কেন? কারণ আপনারা জানেন যে জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
‘সরকার এত দুর্বল যে তাদের প্রত্যেকদিন নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয় নিজেদের রক্ষার জন্য। একটা আইন তৈরি করেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। মানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই যে আপনারা মোবাইল করেন, ফেসবুক করেন সেগুলো তারা মনিটর করে। যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরায়েল থেকে। এটা আবার আল জাজিরা প্রকাশ করে দিয়েছে। ’
তিনি বলেন, আমাদের চিফ জাস্টিস কয়েকদিন আগে বললেন, লেখালেখি করা ভালো, কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়, সেটা আমরা কখনোই মেনে নেবো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, অবশ্যই আমাদের জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়? লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়, সেজন্য আমাদের কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। কারণ আমরা জানাতে যাই, ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদের অবদান ছিল। কাদের অনুপ্রেরণায় কাদের নেতৃত্বে কাদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন রব সাহেব, সেটা পালন করেছি। ৩ মার্চ শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন সেটা পালন করেছি। আমরা ৭ মার্চ পালন করেছি, কারণ সেদিন একটা বিশাল জনসভায় অনুপ্রেরণাময়ী বক্তব্য ছিল। আমরা ৯ মার্চ ইতোমধ্যে পালন করেছি, সেদিন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করেছিলেন। আমরা পালন করবো ২৬ মার্চ, ২৭ মার্চ।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। আমাদের সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করলেন যে সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কী বলবেন? উনি বললেন নো ক্রাইম নো ডেথ। অর্থাৎ, অপরাধ না হলে হত্যা হবে না। হত্যা করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? কোনো দেশের আইনে কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। কেউ অপরাধ করলে বিচার হবে। শাস্তি হবে।