ঢাকা: পুলিশের আইন ভঙ্গের ছবি তুলতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক ও এক শিক্ষার্থী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনায় একটি মোটরবাইকে দুইজন চড়া নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু রোববার বিকেলে দুই পুলিশ সদস্যকেই দেখা যায় একই মোটরবাইকে ঘুরছেন। রাজধানীর বিজয়নগর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ইংরেজি দৈনিক নিউএইজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নাজমুল হুদা বিষয়টি দেখে ছবি তোলেন। এতে ক্ষেপে যায় পুলিশ।
নাজমুলকে ও তার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বন্ধু খায়রুজ্জামান শুভকে আটকে ফেলে পুলিশ। এরপর ঘটনাস্থলেই চলতে থাকে তাদের ওপর মারধর। পরে তাদের রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সেখানেও মারধর করে দুজনকেই গুরুতর আহত করে। পরে তাদের ছেড়ে দিলে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ও পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানায়, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী আইন ভেঙ্গে মোটরবাইকে উঠেছেন। কিন্তু পরে জানা যায়, আইন পুলিশ নিজেই ভেঙ্গেছে। তাদের ছবি তুলে প্রহারের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।
খায়রুজ্জামান শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সানাউল হক জানান, রোববার বিকেল ৫টার দিকে নাজমুল হুদা ও খায়রুজ্জামান শুভ নিজের কাজে রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে যান। এ সময় তাঁরা রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মেহেদি হাসানকে একজন সঙ্গী নিয়ে মোটরসাইকেলে যেতে দেখেন। নাজমুল এই ছবি তোলেন। এ সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে ছবি তোলার কারণ জানতে চান রমনা থানার পরিদর্শক। নাজমুল হুদা বলেন, ‘মোটরসাইকেলে দুজন বসা নিষিদ্ধ। আপনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, তাই ছবি তুলেছি।’ এতে নাজমুলের ওপর চড়াও হন পুলিশ কর্মকর্তা। এসময় বিজয় নগর মোড়ে থাকা কিছু পুলিশ সদস্য এসে তাদের গাড়িতে তুলে রমনা থানায় নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের বেদম পিটুনি দেওয়া হয়। এতে নাজমুল মাথায় আঘাত পান। শুভও গুরুতর আহত হন।
সাংবাদিক সমিতির নেতারা ও নজামুলের হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গিয়ে নাজমুল হুদা ও খায়রুজ্জামান শুভকে নিয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক নুর মোহাম্মদ দুইজনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নাজমুলের মাথার একপাশ ফেঁটে গেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মেহেদি হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় লোকজন তাদের মারধোর করেছে। পুলিশ উদ্ধার করে তাদের থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মসিউর রহমান রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাজমুল হুদা ও তার বন্ধু খায়রুজ্জামান শুভকে দেখতে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা নিন্দনীয়, অমানবিক। ওই পুলিশ সদস্য তার পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়নি।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।