লালমনিরহাট: দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক তরুণীর (১৬) মোবাইল ফোনে অপরিচিত নম্বরে আসে কল। এতে কথা হয় অপর প্রান্তের অচেনা-অজানা ব্যক্তিটির সঙ্গে। এক পর্যায়ে গড়ে ওঠে প্রেম সম্পর্ক। তা চলে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে। এ সুযোগে ‘প্রমিক’ ওই তরুণীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এতে রাজিও হয় তরুণীটি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে সীমান্তের কাছে গেলেই। তাকে পাচার করতে নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ওই তরুণী দৌঁড়ে এসে আশ্রয় নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে।
এমনই ঘটনা ঘটেছে রোববার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত তিনবিঘা করিডোর এলাকায়।
যেখানে প্রেমের আড়ালে পাচারকারী এক যুবক চেয়েছিল ওই স্কুলপড়ুয়া তরুণীকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করতে। কিন্তু তার মিশন সফল হয়নি।
ওই কিশোরী হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকড়ি এলাকার অধির চন্দ্র রায়ের মেয়ে ও উপজেলার উত্তর গোতামারী আজিমবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
বিজিবি, পুলিশ ও ওই কিশোরী জানায়, ওই ছাত্রীর সঙ্গে একই জেলার কালীগঞ্জ বাজার এলাকার বাবু (২৭) নামের এক যুবকের সঙ্গে অপরিচিত নম্বরে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ছয়মাস মোবাইল ফোনে চলে প্রেম।অবশেষে শনিবার সকালে পাটগ্রামের তিনবিঘা করিডোর এবং দহগ্রাম দেখার জন্য নিয়ে ওই যুবক তাকে নিয়ে আসে। সারাদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরানোর পর দহগ্রাম বিওপির পাশের একবাড়িতে ভাই-বোন পরিচয় দিয়ে রাতে থাকেন। সেখান থেকে সকালের ট্রেন ধরার কথা বলে রাত সাড়ে ৪টায় ওই বাড়ি থেকে চলে আসেন। কিন্তু পাটগ্রাম রেলস্টেশনের দিকে না গিয়ে তিনবিঘা করিডোরের পশ্চিম দিক দিয়ে ওই কিশোরী ছাত্রীকে নিয়ে যায় পাচারকারী সদস্য বাবু। কিছুদূর গিয়েই ভারতীয় বিএসএফের ক্যাম্প দেখতে পায় মেয়েটি। তাকে পাচার করে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহ হলে ওই কিশোরী কথিত প্রেমিক বাবুর হাত থেকে ছুটে পালিয়ে এসে বিজিবির তিনবিঘা করিডোর চেক পোস্টে।
এদিকে বিজিবিও মেয়েটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ওই কিশোরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে নাম-পরিচয় পাওয়ার পর তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এবং তাকে পাটগ্রাম থানা পুলিশের কাছে হেফাজতে পাঠায়। পাটগ্রাম থানা পুলিশও সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করে ওই কিশোরীকে হাতীবান্ধা থানায় পাঠায়।
হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী আজিমবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নাসের ইলিয়াছ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলামেইলকে বলেন,‘তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
ওই কিশোরী স্কুলছাত্রীর বাবা অধির চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘যে আমার মেয়ের সর্বনাশ করতে চেয়েছিলেন। আমি তার বিচার চাই।’
দহগ্রাম বিজিবি কাম্পের নায়েব সুবেদার আক্কাস আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলামেইলকে বলেন, ‘কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে পাটগ্রাম থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখান থেকেই বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত)মাহফুজ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা তদন্ত স্বাপেক্ষে কথিত প্রেমিক বাবুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হাতীবান্ধা থানাকে অনুরোধ জানিয়ে কিশোরী স্কুল ছাত্রীটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’