রাজশাহীতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন, নির্বাচনে ভোট চুরি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি মেলেনি। বরং সমাবেশ ঠেকাতে রাজশাহীর সঙ্গে আশেপাশের জেলা শহরগুলোর বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি ধরপাকড় শুরু হয়েছে। প্রতিদিন রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দেয়া হচ্ছে। কালো রাত্রের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলছেন, শান্তির জনপদকে অশান্ত করা হলে রাজশাহীর প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায় নিতে হবে। গতকাল দুপুর ১২টায় নগরীর পদ্মা কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব। এ সময় তারা জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া ও মণিচত্বর- এই ৩ পয়েন্টের যেকোনো একটিতে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী সারা দেশে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। কিন্তু সেই পরিবেশ নষ্ট করতে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। বিগত তিনদিন ধরে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
‘দেশে গণতন্ত্র আছে; বিএনপি নিজেই কর্মসূচি করে না।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মিনু বলেন, দেখে যান রাজশাহীতে কি অবস্থা করা হয়েছে? এর দায়ভার কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। আমরা জানি। বিশ্ববাসী সবাই জানে, এ সরকার নির্বাচিত সরকার না।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলু বলেন, ২০১৮ সালে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে একটি বিশাল সমাবেশে ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি ছিলেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাস-ট্রাক নয়, ছোট ছোট গাড়িও সেদিন বন্ধ করা হয়। উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সংযোগ রাস্তায় ব্যারিকেড বসানো হয়। সরকারি হরতালের ভেতরে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজশাহীতে কোনো কর্মসূচি ডাক দিলে স্বতস্ফূর্তভাবে মানুষ অংশ নেয়। এবার সমাবেশের কোনো পোস্টার লাগাতে বা মাইকিং করতে দেয়া হয়নি। গত ২/৩ দিন ধরে নাটোর-বড়াইগামের মানুষ রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বললে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন নি। পুলিশ অনুমতি দিলো কি দিলো না তার ওপর সমাবেশ নির্ভর করা হবে না। সফলভাবে সমাবেশ সম্পন্ন করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর বিএনপি সভাপতি ও সাবেক রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে যে ৬টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে সেসব মহানগরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভোট ডাকাতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করবো বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২৭ তারিখ খুলনায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়। ২৫শে মার্চ কালরাত্রে মানুষ যেমন আতঙ্কিত ছিল সেভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল।
রাজশাহীর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ৬টি সিটি করপোরেশনে যারা ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন তারা অংশ নেবেন।
বাস চলাচল বন্ধ: এদিকে আকস্মিক রাজশাহী থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ বিএনপি’র সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে পরিবহন নেতার দাবি, হামলার আশঙ্কা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, আগামীকাল (আজ) রাজশাহীতে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা ও যানবাহনে হামলার আশঙ্কা করছেন। তাই শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাস চলাচল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে পরে আবারো বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী দাবি করেছেন, বগুড়ায় তাদের এক শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে। মারধরকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।