অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে মাস্টারমাইন্ডের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের। সেক্সটয় (ফরেন বডি) ব্যবহারের কারণেই অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর কলাবাগানে কথিত বয়ফ্রেন্ড তানভীর ইফতেখার দিহানের বাসায় ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু ঘটে আনুশকার।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি’র সদর দপ্তরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে সিআইডি’র সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, নির্যাতনের সময় মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থীর শরীরে এক ধরনের ফরেন বডি বা সেক্সটয় ব্যবহার করা হয়েছিল। ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, বিকৃত যৌনাচারের কারণে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মারা যায় ওই শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহত আনুশকার শরীরে নির্যাতনের সময় সেক্সটয়ের (ফরেন বডির) উপস্থিতি ছিল। এ ঘটনায় সিআইডি’র ডিএনএ টেস্ট প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত দিহানের ব্যবহৃত ফরেন বডির উৎস খুঁজতে গিয়ে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গত শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা মো. মেহেদী হাসান ভূঁইয়া ওরফে সানি (২৮), রেজাউল আমিন হৃদয় (২৭), মীর হিসামউদ্দিন বায়েজিদ (৩৮), মো. সিয়াম আহমেদ ওরফে রবিন (২১), মো. ইউনুস আলী (৩০), আরজু ইসলাম জিম’কে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে এ সময় অসংখ্য সেক্সটয়, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন কোম্পানির নয়টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। সংঘবদ্ধ এ চক্রটির মূল টার্গেট কিশোর এবং ত্রিশোর্ধ্ব বয়সীরা। তাদেরকে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সেক্সটয় বিক্রি করতো চক্রটি। তাদের স্থায়ী কোনো দোকান নেই। অনলাইনে দেয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে এই সেক্সটয় ক্রয় করে থাকেন ক্রেতারা।
সিআইডির এই অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেক্সটয়ের বিজ্ঞাপন দিতো এই চক্রটি। যারা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন, সেইসঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রেতা হিসেবে টার্গেট করতো চক্রটি। শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থেকে ইতিমধ্যে এই চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, সিআইডি’র সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম ব্যাপক অনুসন্ধানে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রগুলো নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে যৌন উত্তেজক বিভিন্ন পণ্যের ছবি এবং ভিডিওসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। সাইবার মনিটরিং এবং ইনভেস্টিগেশন টিম এ ধরনের একাধিক ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজকে দীর্ঘদিন অনুসরণ করে অবশেষে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বিদেশ থেকে বৈধ পণ্য আমদানির আড়ালে এসব নিষিদ্ধ পণ্য অবৈধভাবে দেশে আনতো তারা। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হতো এই টয়। বিক্রির জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্ম হিসেবে লাইকি, টিকটক ব্যবহার করে গ্রুপ তৈরি করে ডিজেপার্টি, হোটেল, রেস্টুরেন্টের আড়ালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল তারা। এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির আর্থিক লেনদেন করা হতো বিকাশ, নগদ ও রকেটসহ একাধিক মাধ্যমে।