সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভ দমনে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে রোববার বৃহৎ এক প্রতিবাদ সমাবেশের ডাকে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শনিবার সুলে প্যাগোডা, সানছাউঙ্গ টাউনশিপের মাইয়ানিগন ও কামাইত টাউনশিপের হ্লেডানসহ ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ ও সৈন্যরা।
ইয়াঙ্গুনে স্থানীয় সময় দুপুরে আলজাজিরার প্রতিবেদক পুলিশকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করা নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের আক্রমণ করতে দেখেন। বিক্ষোভকারীরা আবার একত্রিত হলে পুলিশ তাদের সহিংস কৌশল বাড়িয়ে আবার হামলা চালায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও নিশ্চিত করে, ইয়াঙ্গুনের মায়াইনিগন অঞ্চলে পুলিশ এক সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করে।
আলজাজিরাকে এক স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অ্যাকটিভিস্ট জানান, রোববারের বৃহত্তর বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে আতঙ্কিত করতেই এই দমন অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে এতে কোনো ফল হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর ফলে পরিস্থিতি বরং আরো অস্থিতিশীল হবে।
এদিকে শনিবার মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় মনওয়া শহরে বিক্ষোভে এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। এই নিয়ে দেশটিতে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি মান্দালায়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা এক বিক্ষোভকারীর বুধবার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।
সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
অভ্যুত্থানের পর থেকে এই পর্যন্ত অন্তত সাত শ’ ৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মিয়ানমারের রাজনৈতিক গ্রেফতারি নজরদারী করা সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের সূত্রে জানানো হয়।
সূত্র : আলজাজিরা