বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে আইনের শাসনের নামে যে অপশাসন চলছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আসলাম চৌধুরী। তাকে নিয়ে যে অন্যায় চলছে, সেটা একদিন আল-জাজিরার মতো বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়ে উঠে আসবে। এজন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে এখন মাফিয়া রাষ্ট্র বললে ভুল হবে না। আল-জাজিরাতে মানুষ দেখেছে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, পরিবারতন্ত্র ধরে রাখার জন্য, দুর্নীতি-লুটপাট চালানোর জন্য কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা আল-জাজিরার প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে। আর এই প্রতিবেদনে খবর হয়েছে মাফিয়াদের। এমনই একদিন আসলাম চৌধুরীকে নিয়েও আল- জাজিরায় খবর হতে পারে।
তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরী একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ, একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, শিক্ষিত ভদ্রলোক। তিনি বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা। আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় বিএনপি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এর পরিণামে তিনি ক্ষমতা দখলকারীদের আইনের অপশাসনের শিকার হয়েছেন। তার সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তার মতো একজন মানুষকে বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি, শাসনের নামে যে অপশাসন চলছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যে প্রতিনিয়িত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন, তার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আসলাম চৌধুরী। আসলাম চৌধুরী যদি অপরাধ করে, স্বচ্ছভাবে তার বিচার হোক। কিন্তু তার যে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, এর বিচার আমরা কিভাবে পাবো? এখন তো বিচার পাওয়া দূরের কথা, বিচার চাওয়াও মুশকিল হয়ে গেছে।
আমীর খসরু আরো বলেন, যারা ক্ষমতা দখল করে আছে, আমি তাদের সরকার বলি না, এরা একটা রেজিম। কিছু সরকারি কর্মকর্তা, কিছু ব্যবসায়ী আর কিছু রাজনীতিবিদ মিলে ক্ষমতায় থাকার জন্য আদালত-পুলিশকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে এই রেজিম তৈরি করেছে। একটা মানুষের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দেয়া এটা ভাবা যায়? দেশটা দখলের জন্য তারা কী না করছে! বেআইনিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গুম-খুন-মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, মানুষকে জেলে ভরে রাখছে আইনের শাসনের নামে। এই অপশাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, যারা আসলাম চৌধুরীকে মামলা দিয়ে, আদালতে সময়ের আবেদন করে, নানা কৌশলে জেলে রাখছেন, তারা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসুন। তার নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। তাকে মুক্তি দিন। বিশ্ব খুব ছোট হয়ে গেছে। বিশ্বের দৃষ্টিগোচরের বাইরে খুব বেশিদিন থাকা সম্ভব না। আজ না হয় কাল দায়ভার ভোগ করতেই হবে। বাংলাদেশে অনেকেই এভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, শেষ রক্ষা হয়নি। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকা যায় না। বাংলাদেশের জনগণ সব সময় নিজের পথ বেছে নিয়েছে। ১৯৭১ সালে নিয়েছে, ভাষা আন্দোলনে নিয়েছে, এরশাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও নিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনে যারা ছিল, জনগণ যখন সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল। সুতরাং জনগণ এবারও পথ বেছে নেবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ই মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আসলাম চৌধুরী। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তাতে কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে গেছেন। তাকে মুক্তি না দিয়ে শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জামিন নিতে গেলে সরকার বারবার সময়ের আবেদন করে। এর অর্থ হচ্ছে তাকে জেলে আটকে রাখা। এভাবে শুধু সময়ের আবেদন করে আসলাম চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছে। সব মামলায় জামিনের পর মুক্তির আগ মুহূর্তে নতুন আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর তথ্য দিয়ে আমীর খসরু বলেন, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঁচ বছর পর সে সব মামলায় জামিন পেলো। সবশেষ মামলায় জামিন পাওয়ার পরও গত ৩রা জানুয়ারি তাকে আবার আট বছর আগের ঢাকার শাহবাগ থানার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ওই মামলায় সে আসামিও ছিল না। আদালতে আবেদন করে পুলিশ তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায়। তিনদিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক মাসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করে। এভাবে আসলাম চৌধুরীর মুক্তি আটকে দেয়া হচ্ছে। এভাবেই সে পাঁচ বছর ধরে জেলে আছে। যদিও কোনো মামলায় তার সাজা হয়নি, কিন্তু জেল আইনে সে ছয় বছর সাজা এরই মধ্যে ভোগ করে ফেলেছে। এটা তো আইনের শাসন না। তার যদি সাজাও হতো, তাহলেও তো তাকে এতোদিন কারাগারে থাকতে হতো না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সমপাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুুখ।