পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, নদী, কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাটের প্রয়োজন হলে আগে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জাতীয় পরিবেশ কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় কৃষিমন্ত্রী মো: আব্দুর রাজ্জাক, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: এনামুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকারসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাশেষে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিবেশ নীতি ২০১৮-এ পূর্বের নীতিমালার ১৫টি বিষয় ছাড়াও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, পাহাড়, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং জীবনিরাপত্তা, প্রতিবেশবান্ধব পর্যটন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা প্রস্তুতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবস্থাপনা, অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতিতে চিহ্নিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাসমূহ তাদের স্ব-স্ব কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
মো: শাহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, পুকুর, ডোবা, খাল-বিল, নদী, কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট বা শ্রেণী পরিবর্তন করতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে ভরাট করার প্রয়োজন হলে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নিতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার আওতাধীন প্রাকৃতিক জলাশয় ও পুকুর বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় যেকোনো ভরাট কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
পাহাড়-প্রতিবেশ সংরক্ষণে অবৈধভাবে পাহাড়কাটা বন্ধ করা নিয়ে তিনি বলেন, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পাহাড় কাটা প্রয়োজন হলে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশ অধিদফতর থেকে অনুমোদন নিতে হবে। পাহাড় কাটার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট প্রত্যাশি সংস্থা থেকে কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে ও অবৈধভাবে পাহাড় কাটার জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইবুনাল গঠন করা যেতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সহায়তায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা শহর ও পৌরসভার মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জরুরি ভিত্তিতে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পরিবেশবান্ধব ইনসিনারেটর, ইটিপি ইত্যাদি স্থাপন করতে হবে। পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে জৈবপচনশীল ব্যাগের ব্যবহারে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করবে। এর পাশাপাশি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক রি-সাইক্লিং শিল্পকে প্রণোদনা দেয়া হবে।
ইটভাটা আইন ২০১৯ বান্তবায়ন কৌশল নিয়ে পর্যালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছিদ্রযুক্ত ইট তৈরি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ব্লক ইট তৈরিতে শুল্ক হ্রাস অথবা সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সরকারের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে ব্লক ইট ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় প্রণীত গাইডলাইন বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে একটি তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
নির্মাণজনিত ও যানবাহনজনিত বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ নেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, নির্মাণ কাজের টেন্ডার সিডিউলে বায়ু দূষণ রোধে সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম চিহ্নিত করতে হবে। কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সমেন্টের পাশাপাশি বিআরটিএ এবং পুলিশ প্রশাসনের দৃশ্যমান কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গমন পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিতভাবে পর্যাযক্রমে ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।