গাজিপুর ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১: তিনি একজন সাংবাদিক। অপরাধ নিবন্ধনহীন এনজিওর আড়ালে সুদ ব্যবসার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা। এই চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি দুটি হাত এবং দুটি পা হারিয়ে আজ পঙ্গুত্ব বরন করতে চলছেন। কিন্তু আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ খুঁজে পায়না।
এশিয়ান টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি, সাহসী সাংবাদিক আবুবকর সিদ্দিক। পেশার পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা সভাপতির দায়িত্বপালন করছিলেন। সংবাদের কারনে প্রতিপক্ষের রোষানলে তাকে হত্যা মামলারও আসামি হতে হয়েছে। কারাবাস করতে হয়েছে বহুবার।
সম্প্রতি সুদ কারবারিদের হাতে জিম্মি অসহায় মানুষের পক্ষে কলম চালাতে গিয়ে চিরতরে স্তব্ধ হতে চলছে তার সাহসী কলম। সুস্থ্য হয়ে আর কলম চালাতে পারবে কিনা, এখনও অনিশ্চিত। তার এরুপ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তান রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীন। প্রভাবশালী আসামিরা পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে এলাকায় ঘুরে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। ফলে বিগত একমাস অতিবাহিত হলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দু’টি শিশু সন্তান নিয়ে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীন রয়েছে। সরকারের নিকট তার স্ত্রী রুমা সিদ্দিক পরিবারের নিরাপত্তা এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
নির্যাতনের এরুপ চিত্র যদি সমাজের সবচে নিম্মমানের কোন পেশার লোকের বেলায় ঘটতো তবে সেই আসামিও গেফতার করতো পুলিশ। যেহেতু বাদী একজন সাংবাদিক তাই আসামি গ্রেফতার হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর। তিনি অবিলম্বে এজাহারভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনারও দাবি করেন।
এদিকে একটি অসমর্থিত সূত্র দাবি করেছে, পুলিশ আসামিদের সাথে সখ্যতা করে মামলা থেকে অব্যাহতিদানের নীলনকসা আঁকছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি রাতে পেশাগত দায়িত্ব শেষে নিজের প্রাইভেট কারযোগে বাসায় ফেরার পথে হোতাপাড়া নামক স্থানে হামলার শিকার হন। এসময় তাকে পথরোধ করে টেনেহিছড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে হাতপা ভেঙ্গে মৃত ভেবে রাস্তার ওপর ফেলে যায়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা পুলিশে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে গাজিপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় পরদিন ২১ জানুয়ারী নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সিদ্দকের স্ত্রী রুমা সিদ্দিক বাদি হয়ে আমিনুল ইসলাম, এমদাদ মেম্বর ও মজিবুর রহমানকে নামধারী এবং অজ্ঞাতনামা ৩/৪জনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
এঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, গাজীপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে সোচ্চার রয়েছে। কিন্তু পুলিশের নীরব ভুমিকায় সাংবাদিকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক সিদ্দিক বিএমএসএফকে জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। অপারেশনের কারনে শরীরে প্রচুর ব্যথা রয়েছে। কোমড়ের হাড় কেটে নিয়ে হাতে লাগানো হয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালের ডা. খালেদ ইকবালের নেতৃত্বে একটি টিম অপারেশন সম্পন্ন করেন। হাত পায়ে রড ঢোকানো হয়েছে। তার সুস্থ্যতার জন্য সাংবাদিকসহ সকলের কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন।